শামুকতলা: অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ফুসলিয়ে মোটরবাইকে চাপিয়ে আটিয়ামোচর জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল এক তরুণ। কিন্তু স্কুলড্রেস পরা এবং বইয়ের ব্যাগ থাকায় এক শিক্ষকের সন্দেহ হয়। তিনি মোটরবাইক নিয়ে পিছু ধাওয়া করেন। বেশ কিছুটা গিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করতে পারেন। তরুণটি পালিয়ে যায়। ছাত্রীকে তার বাবা-মায়ের হতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কামাখ্যাগুড়িতে।
ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে কামাখ্যাগুড়ি হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মানিক সাহা জানতে পারেন, স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ছেলেটি প্রতিদিনই স্কুলের গেটের সামনে অথবা মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকত। মাঝেমধ্যে কথা বলত, চকোলেট-বিস্কুট খেতেও দিত। বৃহস্পতিবার মেয়েটি স্কুলে যাওয়ার সময়ই রাস্তা আটকে তাকে রসিকবিল ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ওই তরুণ। সে প্রথমে যেতে রাজি না হলেও তাকে বলা হয় টিফিনের আগেই আবার স্কুলে পৌঁছে দেবে। ছাত্রীটি রাজি না থাকলেও অনেকটা জোর করেই তাকে বাইকে তুলে নেয় ওই তরুণ। ওই পথ দিয়ে ফিরছিলেন মানিকবাবু। সেই সময় স্কুলড্রেস পরা এবং বইয়ের ব্যাগ থাকা এক ছাত্রীকে বাইকে যেতে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি পিছু ধাওয়া করেন। বেশ কিছুটা যেতেই ওই তরুণ টের পেয়ে যায়। সে তখন ওই ছাত্রীকে বাইক থেকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
দিনদুপুরে এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন কামাখ্যাগুড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমি সরকার। তিনি বলেন, খুবই উদ্বেগের ঘটনা। তবে আমাদের সহকারী প্রধান শিক্ষক মানিকবাবু উদ্যোগী না হলে বড় অঘটন ঘটে যেতে পারত।
আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়ের হাতে মোবাইল ফোন চলে আসায় এই ধরনের নানা সমস্যা হচ্ছে। পুলিশের উদ্যোগেও প্রতিটি স্কুলে আমরা ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করে থাকি। এরপরেও কিছু ছাত্রছাত্রী এই ধরনের ভুল করে ফেলে। তবে এ ব্যাপারে স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের আরও সাবধান হতে হবে।
সাঁওতালপুর মিশন হাইস্কুলের শিক্ষিকা দীপিকা রায় বলেন, ‘প্রথমেই মানিকবাবুকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমন ঘটনা সত্যিই আমাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। আমরা বরাবরই ছাত্রছাত্রীদের এ ব্যাপারে সচেতন করে থাকি। প্রতিটি স্কুলে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও নেওয়া দরকার।’
মানিকবাবু ছাত্রীটিকে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন। মানিকবাবুর হাত ধরে রীতিমতো কেঁদে ফেলেন ছাত্রীর অভিভাবকরা। তাঁরা মানিকবাবুকে বলেন, আপনার জন্যই মেয়েটিকে ফিরে পেলাম। কত বড় অঘটনই না ঘটে যেতে পারত। তবে এই ঘটনার পর মানিকবাবু বলেন, শিক্ষক হিসেবে এটা আমার কর্তব্য। এ এমন কিছু নয়।