দীপেন রায়, মেখলিগঞ্জ: ভারতে ঢুকে অবৈধভাবে এখানকার আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট বানিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে আমেরিকা বা ইংল্যান্ড যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল। বাংলাদেশি এক তরুণ সেইমতো দালালদের সঙ্গে কথাও বলেছিল। তাদের মাধ্যমে ভারতেও ঢুকেছিল। জাল পাসপোর্ট তৈরির জন্য তারপর কলকাতা ও দিল্লিতেও গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে মাথার ব্যাধি বাদ সাধে। চিকিৎসার জন্য সে চেন্নাইয়ের (Chennai) একটি হাসপাতালে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা করে আমেরিকা বা ইংল্যান্ড যাওয়ার ইচ্ছা বন্ধ করে দেশে ফেরার জন্য সে এবার মেখলিগঞ্জ (Mekhliganj) ব্লকের কুচলিবাড়ি সীমান্ত আসে। কুচলিবাড়ির অমর এলাকায় খোলা সীমান্ত দিয়ে মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সময় সে বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে। বিএসএফ সূত্রে খবর, বিশ্বজিৎ রায় নামে ওই তরুণ বাংলাদেশের পাটগ্রামের বাসিন্দা।
একই দিনে কুচলিবাড়ি সীমান্তে আরও দুই মহিলা গ্রেপ্তার (Bangladeshi arrested) হয়। তারা আবার ২০১৬ সালে কুচলিবাড়ির খোলা সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করে। এরপর পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হিসাবে পরিচয় দিয়ে জয়পুরে কাজ করছিল। পরিবারের টানে আট বছর পর দেশে ফেরত যেতে একই খোলা সীমান্তে আসে। বাংলাদেশে অবৈধভাবে যাওয়ার পথে বিএসএফের (BSF) ভীম আউটপোস্টের জওয়ানরা তাদের গ্রেপ্তার করে। ধৃত দুই মহিলার মধ্যে একজন বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলা আর অন্যজন পাবনা জেলার বাসিন্দা। বিএসএফ সূত্রে খবর, দুই মহিলাকে এক ভারতীয় দালাল এনজেপি স্টেশন থেকে কুচলিবাড়ি সীমান্তে এনেছিল। প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছিল।
শুধু এই তিনজনেই নয়, নতুন বছরে ইতিমধ্যেই কুচলিবাড়ি সীমান্তে প্রায় ১৫ জন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। বেশিরভাগই কাজের সূত্রে অনুপ্রবেশ করেছিল। কুচলিবাড়ির প্রায় ১৮ থেকে ২০ কিমি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। মূলত বাংলাদেশের দহগ্রাম অঙ্গারপোঁতা ছিটমহলের চারিদিকে খোলা সীমান্ত। এই সীমান্তকেও কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতীরা পাচার ও অনুপ্রবেশের করিডরে পরিণত করেছে। কুচলিবাড়ি সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক উৎপল রায় এই সীমান্তে দ্রুত কাঁটাতারের বেড়ার দাবি তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘কাঁটাতারের বেড়া তৈরি না হলে অনুপ্রবেশ কমবে না। এখনও আমাদের নিরাপত্তা নড়বড়ে রয়েছে। তাই দ্রুত কাঁটাতারের বেড়ার দাবি জানাচ্ছি।’
কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকার জমি দিলে ছয় মাসের মধ্যেই কাঁটাতারের বেড়া হয়ে যাবে।’ যদিও রাজ্যের শাসকদল মন্ত্রীর তত্ত্ব মানতে নারাজ। তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সহ সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত সরকারের বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকার জমি না দিলে গোটা রাজ্যে কাঁটাতারের বেড়া কীভাবে তৈরি হল? খোলা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তৈরিতে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগই নিচ্ছে না।’ সীমান্তে অনুপ্রবেশ নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিএসএফের আইজি সূর্যকান্ত শর্মার বক্তব্য, ‘কুচলিবাড়িতে একদিকে খোলা সীমান্ত রয়েছে। তার উপর সীমানা বরাবর তিস্তা নদীর বিশাল চর রয়েছে। প্রতিকূল সীমান্তকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশিরা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে বিএসএফ জওয়ানরা সদা তৎপর রয়েছেন। মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ধরা পড়ছে।’