রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: স্বাস্থ্য দপ্তর বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি) উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এমআরআই পরিষেবা দিচ্ছে। এজন্য প্রতি মাসে ৪৫-৫০ লক্ষ টাকা বিল মেটাতে হচ্ছে। অথচ সরকারিভাবে কেনা এমআরআই বসিয়ে রাখা হয়েছে। এমন ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। অভিযোগ, বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে বসানো এমআরআইতে বহু উলটো-পালটা হিসেব রয়েছে।
এখানে অনেকের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। নিজেদের এমআরআই চালানো দূরে থাক, পিপিপি মোডে চলা এমআরআইতে আরও বেশি সংখ্যায় পরীক্ষার জন্য লেখা হচ্ছে। তাহলে অনেকেরই লাভ। হাসপাতালের সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক অবশ্য বলেন, ‘সরকারিভাবে একটি এমআরআই বসেছে। তবে, লোকবল কম থাকায় সেটি চালানো যাচ্ছে না। দ্রুত লোকবলের ব্যবস্থা করে ওই এমআরআই চালানোর চেষ্টা করছি।’
উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতার একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্বাস্থ্য দপ্তর এমআরআই পরিষেবা চালু করেছে। রোগ অনুযায়ী এমআরআই করতে সংস্থাটি রোগী প্রতি ২০০০-৫০০০ টাকা পর্যন্ত বিল করে। প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টি এমআরআই হয়। তারপরও অবশ্য রোগীদের হয়রানির শেষ নেই। গুরুতর অসুস্থ রোগীর এমআরআই করতেও ১৫-২০ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। অথচ সুপারস্পেশালিটি ব্লকে প্রায় এক বছর আগে এমআরআই মেশিন বসানো হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি টাকায় কেনা এই এমআরআই মেশিন ইনস্টলেশন করে ট্রায়ালও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে এমআরআই করা হচ্ছে না।
কিন্তু কেন সরকারি টাকায় এমআরআই বসিয়ে রেখে বেসরকারি সংস্থাকে প্রতিদিন এত টাকা দেওয়া হচ্ছে? চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, মেডিকেলের এমআরআইতে বড় চক্র সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রে হাসপাতালের একাধিক মাথা জড়িত। যত বেশি এমআরআই লেখা হবে, তত বেশি কমিশন পকেটে ঢুকবে। কিছু ক্ষেত্রে আবার একই রোগীকে একাধিকবার এমআরআই করার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। কোনও রোগী এমআরআই করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে তাঁকে বলা হচ্ছে, এখানে কিছু বোঝা যাচ্ছে না, আবার এমআরআই করিয়ে নিয়ে আসুন। এক্ষেত্রে রোগীর ভোগান্তি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কারও কমিশন বাড়ছে। আবার এখানে দালালচক্রেরও দাপট রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে এই এমআরআই থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার কাটমানি বিভিন্ন জায়গায় যায়। সরকারিভাবে সুপারস্পেশালিটি ব্লকে বসানো এমআরআই চালু করা হলে সবার সব কমিশন, কাটমানি বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্যই লোকবলের দোহাই দিয়ে ওই এমআরআই বসিয়ে রাখা হয়েছে।