শিলিগুড়িঃ দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান। সোমবার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ত্রিপুরার সিপাইজলা চিড়িয়াখানা (Sepahijala Zoo in Tripura) থেকে বেঙ্গল সাফারিতে (Bengal Safari park) এসে পৌঁছাল দুটি সিংহ এবং চশমামুখো বাঁদর। এদিন বেলা ১টা ১০ মিনিট নাগাদ সিংহ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী নিয়ে বেঙ্গল সাফারি পার্কে এসে পৌঁছায় পার্কের কর্মীরা। একটি সিংহের নাম আকবর, অপরটির নাম সীতা। এদের দুজনের মধ্যে সখ্যতা রয়েছে। আপাতত কোয়ারান্টিনে রাখা হবে। দিন কয়েক পর তাদের আনা হবে পর্যটকদের সামনে।
বাঘ, ভালুক, হাতি, গন্ডার সবই রয়েছে। শুধু অভাব ছিল পশুরাজের। জঙ্গলের রাজ থাকবে না এটা আবার হয় নাকি! অবশেষে সেই অভাবও পূরণ হয়ে গেল বেঙ্গল সাফারি পার্কে। সোমবার ত্রিপুরার সিপাইজলা চিড়িয়াখানা থেকে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে এসে পৌঁছাল পশুরাজ দম্পতি, চশমামুখো বানর আরও বেশ কিছু বন্যপ্রাণী। জানা গিয়েছে, অ্যানিমাল এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়ায় ত্রিপুরার সিপাইজলা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি সিংহ আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয় শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে। তার বদলে এখান থেকে দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দুটি লেপার্ড সহ বেশ কিছু বিদেশি পাখি পাঠানো হয় সিপাইজলা চিড়িয়াখানায়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সাফারি পার্ক থেকে ওই প্রাণীগুলিকে ত্রিপুরার উদ্দেশ্যে রওনা করানো হয়। পাঁচ তারিখ বিকেলে সেখানে পৌঁছে গিয়েছে। এরপরই সেখান থেকে সিংহ সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের নিয়ে রওনা হন সাফারি পার্কের কর্মীরা। সঙ্গে ছিল চিকিৎসক এবং লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম সমেত অ্যাম্বুল্যান্স।
বেঙ্গল সাফারি পার্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ত্রিপুরার বিশালগড়ে অবস্থিত সিপাইজলা জুয়োলজিক্যাল পার্ক থেকে যে সিংহ দম্পতিকে আনা হচ্ছে তাদের নাম আকবর আর সীতা। আকবরের জন্ম ২০১৬ সালে। বাবা দুষ্মন্ত ও চিন্ময়ী সিপাইজলা চিড়িয়াখানায় তিন শাবকের জন্ম দিয়েছিল। পরে তাদের নামকরণ করা হয়েছিল অমিতাভ বচ্চন ও ঋষি কাপুরের সিনেমা অমর, আকবর ও অ্যান্টনি। সেই তিন শাবকের মধ্যে আকবরকে বেঙ্গল সাফারি পার্কের জন্য বেছে নেয় সেন্ট্রাল জু অথোরিটি ও রাজ্য জু অথোরিটি। বর্তমানে ওর বয়স সাত বছর। পাশাপাশি ত্রিপুরা চিড়িয়াখানাতেই ২০১৮ সালে জন্ম হয় সীতার। এখন সীতার বয়স পাঁচ বছর।
বেঙ্গল সাফারি পার্কে আসার আগে থেকেই সখ্যতা রয়েছে আকবর ও সীতার। তাদের দুজনের একসঙ্গে থাকার অভ্যেস রয়েছে। রয়্যাল বেঙ্গলের পর সিংহর প্রজননেও সফলতা আসবে বলে আশাবাদী বেঙ্গল সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, বেঙ্গল সাফারি পার্কে সিংহের জন্য একটি পৃথক এনক্লোজার তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পানীয় জল থেকে শুরু করে গরমকালের জন্যে ছোট ছোট গর্ত রাখা হচ্ছে। সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে ওই গর্তগুলো। গরমের সময় সেখানে জল দেওয়া হবে, যাতে সিংহগুলো শরীর ভিজিয়ে নিতে পারে। পুরুষ সিংহটিকে প্রতিদিন দেওয়া হবে ৭ কেজি করে গোরু অথবা মহিষের মাংস। আর স্ত্রী সিংহের জন্য বরাদ্দ ৫ কেজি মাংস। এদের দেখভাল করার জন্য দুজনকে নিয়োগ করেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
নতুন বছরের শুরুতেই রয়্যাল বেঙ্গল, গণ্ডার, হাতি সাফারির পাশাপাশি পশুরাজ সিংহ’র সাফারি মজা উপভোগ করতে পর্যটকদের ঢল নেমেছিল। এবার সিংহের আগমনে গরিমা বাড়ল সাফারি পার্কের। ফলে পর্যটকদের আরও ঢল নামবে বলে আশাবাদী পার্ক কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে সিংহ আনার প্রক্রিয়া চলছিল। মাঝে একবার অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রীয় জু অথরিটির কাছে আবেদন করেছিল বেঙ্গল সাফারি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাগজপত্রে খামতি থাকায় সেগুলি ফেরত পাঠানো হয়। এরপর সমস্ত কাগজপত্র ঠিক করে ফের আবেদন জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই আবেদনে সবুজ সংকেত দেয় কেন্দ্রীয় জু অথরিটি। সেইমতো ত্রিপুরার সিপাইজলা চিড়িয়াখানা থেকে আনা হল দুটি সিংহ।