পল্লব ঘোষ ও ভাস্কর শর্মা, আলিপুরদুয়ার ও ফালাকাটা: নতুন বছর মানেই ব্যবসায়ীদের হালখাতা ও গ্রাহকদের জন্য উপহারে নতুন ক্যালেন্ডার (Bengali calendar)। সময়ের পরিবর্তনে চাহিদা কমেছে হালখাতার। এখন অনেক ব্যবসায়ীই আর সেই পুরোনো দিনের প্রথা মেনে হালখাতা করছেন না। ক্রেতারাও উপহারে পাচ্ছেন না ক্যালেন্ডার। ব্যস্ততা কমেছে ছাপাখানায়। এ নিয়ে আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) ও ফালাকাটায় (Falakata) ব্যবসায়ীদের মন খারাপ।
এখনও অবশ্য পুরোপুরি মুছে যায়নি প্রথা। সেই প্রসঙ্গ টেনে এক ব্যবসায়ী গোপাল মোদক বলেন, ‘বছরভর ব্যবসা করার পর যাঁরা নিয়মিত ক্রেতা, তাঁদের কিছু আশা থাকে। বছরের প্রথম দিনে তঁাদের মিষ্টিমুখ করাতে পারলে এবং ক্যালেন্ডার দিলে বছরভর থাকে মধুর সম্পর্ক। কিন্তু এখন এই চল দেখাই যায় না।’ কারণ হিসাবে গোপালের যুক্তি, ‘ক্যালেন্ডার তৈরি করানোর খরচ অনেক বেড়েছে। তবুও অনেক ব্যবসায়ী সেই ঐতিহ্য এখনও পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখছেন।’
ব্যবসায়ী শিশির সূত্রধর বলেন, ‘সবকিছু অনলাইনেই হয়ে যায় আজকাল। হিসেব রাখাটাও কম্পিউটারাইজড হয়ে গিয়েছে বড় বড় দোকানগুলিতে। তাই হালখাতার জমানা প্রায় নেই বললেই চলে। নিয়মরক্ষার জন্য অনেকে রাখেন, অনেকে আবার সেটাও করে না।’
হালখাতা বিক্রেতা পবন শর্মার কথায়, ‘দোকানে পুরোনো হালখাতা এখনও আছে। নতুন হালখাতাও চলে এসেছে কয়েকদিন হল। খুব বেশি আনা হয়নি। কারণ এখন চাহিদা কমেছে। শিলিগুড়ি ও কলকাতা থেকে হালখাতা নিয়ে আসা হয়। যার মধ্যে লাল রঙের বাইন্ডিং করা লম্বা হালখাতার দাম পড়ছে ২০ টাকা করে।’ তিনি জানান, শুধু হালখাতা নয়, বাইন্ডিং করা মোটা খাতাগুলোও নববর্ষে অনেকে কিনে নিয়ে যান। সৌভিক কুণ্ডু শুধু নিয়মরক্ষার জন্য একটা ছোট খাতা কিনে নিয়ে আসেন দোকান থেকে। তিনি সব হিসেবই কম্পিউটারে রাখেন।
সবকিছু ডিজিটাল হয়ে গিয়েছে। কমেছে ক্যালেন্ডার-ডায়েরির চাহিদাও। ছাপাখানার মালিক শিবু সরকারের মতে, নববর্ষের আগের সেই ব্যস্ততা আর দেখা যায় না। দিনরাত সকলকে লেগে থাকতে হত। হালখাতার চাহিদা তো কমই, পাশাপাশি চাহিদা কমেছে ক্যালেন্ডারেরও।
ফালাকাটার ব্যবসায়ীদেরও মন খারাপ। নববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রতিবছর পঞ্জিকা, ক্যালেন্ডারের ব্যবসা করেন। তঁাদের কাছ থেকেই অন্য ব্যবসায়ী সহ সাধারণ মানুষ পঞ্জিকা, ক্যালেন্ডার কিনে হালখাতা সারেন। ফালাকাটার পঞ্জিকা ব্যবসায়ী সুজয় সাহার কথায়, ‘এবার দোকানে প্রচুর পঞ্জিকা তুলেছি। কিন্তু ভোট নিয়েই যা ব্যস্ত সবাই। কেউ আর পঞ্জিকা কিনতে আসছেন না।
শহরের চৌপথি এলাকার ক্যালেন্ডার ব্যবসায়ী প্রবীর কুণ্ডু বলেন, ‘আমরা কলকাতা থেকে ক্যালেন্ডার নিয়ে এসে পাইকারি ও খুচরো বিক্রি করি। এবারও প্রচুর ক্যালেন্ডার তুলেছি। কিন্তু সেইভাবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের থেকে অর্ডার পাইনি। হাতে সময়ও কম। এখন আর নতুন করে কেউ অর্ডার দেবেন বলে মনে হয় না।’