মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: শনিবার বক্সায় (Buxa Forest) রায়ডাক গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্তিকা গ্রামের বাসিন্দা ফরেস্ট গার্ড কায়েম আলি মিয়াঁ (৫৭)-র বুনো হাতির আক্রমণে মৃত্যুর (Forest Worker Death) জেরে বন দপ্তরের উপর ক্ষোভ বেড়েছে। অভিযোগ, দপ্তরের নীচুতলার কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসুরক্ষিত অবস্থায় কাজে বাধ্য হন। সেজন্যই শনিবার কায়েমকে প্রাণ হারাতে হয়। তাঁদের অভিযোগ, কর্মী সংকট, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব সুরক্ষাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বাঘ শুমারি, হাতি তাড়ানো, লোকালয়ে ঢোকা বাইসন খেদানো, ভালুককে জঙ্গলে ফেরানো থেকে কাঠপাচার-চোরাশিকারি ঠেকাতে তাঁরাই ভরসা। কিন্তু তাঁরা কার্যত ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দার। দপ্তর সূত্রে খবর, বক্সায় ফরেস্ট গার্ডের প্রায় অর্ধেক পদ শূন্য। এক সময় শূন্যপদ পূরণ ও ফরেস্ট গার্ডদের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু তিনি এসব পূরণের আগেই দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দি। তারপর থেকে এনিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য নেই। তাঁদের অভিযোগ, দপ্তরের কর্তারা নীলবাতির গাড়িতে জঙ্গলে ঘোরেন, ঠান্ডাঘরে বসে নির্দেশ দেন। কিন্তু বনের ভিতর হিংস্র পশুর মুখোমুখি হয়ে ফরেস্ট গার্ডেদেরই কাজ করতে হয়। কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তা ও অভাব-অভিযোগের বিষয়টি তাঁরা গুরুত্ব দেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ফরেস্ট গার্ড জানান, মাঝেমধ্যেই বক্সার জঙ্গলে হাতি তাড়াতে গিয়ে কর্মীদের বিপদে পড়তে হয়। অনেকেই জখম হয়েছেন। কর্তারা জানলেও গুরুত্ব দেন না। শনিবার হত বনকর্মী খুবই দক্ষ ছিলেন বলে দপ্তরের কর্তারা স্বীকার করেন। সহকর্মীর এমন মৃত্যুতে বহু গার্ড কাজের মনোবল হারান। বাঘ শুমারি শুরুর দিনের ঘটনায় ১৫ মার্চের মধ্যে একাজের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গার্ডরা জানান, তাঁদের ডাবল ব্যারেল, সিঙ্গেল ব্যারেল, পাম্প অ্যাকশন বন্দুক দেওয়া হয়। অধিকাংশই বহু পুরোনো। অনেক সময় ট্রিগার চাপলেও ফায়ার হয় না। ফলে, তাঁদের বন্দুক ছেড়ে পালানো ছাড়া উপায় থাকে না।
ওয়েস্ট বেঙ্গল সাব-অর্ডিনেট ফরেস্ট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক সুকান্ত চৌধুরী বলেন, ‘একজন বনকর্মীর কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর পর মর্গে অনেকক্ষণ কোনও কর্তা খোঁজ নেননি। এতে নীচুতলায় মনোবল দুর্বল হওয়া স্বাভাবিক।’ ডিএফডি (পূর্ব) দেবাশিস শর্মার সাফাই, ‘কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়েই শুমারিতে পাঠানো হয়েছিল। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
জয়ন্তী রেঞ্জের গার্ডরা জানান, বাঘ থাকতে পারে এমন কোর এলাকায় তাঁদের মান্ধাতার আমলের একটা বন্দুক, গোটা কয়েক চকোলেট বোম ধরিয়ে ডিউটিতে পাঠানো হয়। বন দপ্তরের দাবি, বক্সায় বাঘ, হাতি বেড়েছে। তাহলে গার্ডদের কেন নিরাপত্তা থাকবে না? বাসিন্দাদের গুরুতর অভিযোগ, বনে যত্রতত্র গেট বসিয়ে বন দপ্তর পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের উপর নানা নিয়ম চাপাচ্ছে। প্রবেশমূল্যের নামে মোটা টাকা আদায় করছে। কিন্তু গার্ডদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনা নেই কেন?