বালুরঘাট: ট্রেন আসার সময় সকাল ১০:৫০ মিনিট। ছাড়বে বিকেল চারটায়। তবে এটি কোনও যাত্রীবাহী ট্রেন নয়। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি একটি স্কুল ভবন। বালুরঘাট ব্লকের চকরাম প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ট্রেনের বগির রূপ দেওয়া হয়েছে। মূলত পড়ুয়াদের স্কুলের প্রতি আকৃষ্ট করতে তথা স্কুল ছুটের সংখ্যা কমাতেই এমন উদ্যোগ। কোনও সরকারি ফান্ড ছাড়াই শিক্ষকরা নিজেদের উদ্যোগেই স্কুল ভবনকে আস্ত ট্রেনের রূপ দিয়েছেন।
চকরাম গ্রামে প্রায় ৮০ শতাংশই তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত সম্প্রদায়ের বসবাস। গ্রামের মাঝখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রয়েছে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের শহিদ চুড়কা মুর্মুর স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে গিয়ে পাকিস্তান সেনার গুলিতে চুড়কার শহিদ হওয়ার ইতিহাস অনেকেরই জানা। প্রতি বছর অগাষ্ট মাসে এখানে সাড়ম্বরে শহিদ দিবস পালন করা হয়। বিদ্যালয়ে ঢুকতেই পড়ুয়াদের স্কুলছুট কমাতে শিক্ষকদের অভিনব প্রচেষ্টা চোখে পড়বে। সরকারি সাহায্য ছাড়াই শিক্ষকদের ব্যক্তিগত অর্থ ব্যয়ে ক্লাসরুম সাজানো হয়েছে আস্ত এক রেল গাড়ির কামরার অনুকরণে। যার নাম দেওয়া হয়েছে চকরাম এডুকেশনাল এক্সপ্রেস। স্কুল স্টেশনের নাম চকরাম এফপি স্টেশন। মিড ডে মিল খাওয়ার জন্য রয়েছে বিশাল ডাইনিং হল। স্কুল চত্বরে তৈরি হয়েছে দোলনা, ঢেকি, স্লিপার সহ খেলার যাবতীয় আয়োজনে নির্মিত একটি পার্ক। বিদ্যালয়ের ফুল ও সবজি বাগানের পরিচর্যায় খুদেদের উদভাবনার প্রতিযোগিতা যেন ‘কিছু করে দেখাই’। বিদ্যালয়ের নিজস্ব সাউন্ড সিস্টেমে চলে নাচ, গান, আবৃত্তির তালিম। পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে এমন উদ্যোগে আপ্লুত অবিভাবক ও গ্রামবাসীরা।
স্কুলের শিক্ষক অপূর্ব মণ্ডল বলেন, ‘পড়ুয়াদের স্কুলে টানতে ২০২২ সালে নিজেদের খরচে প্রায় ১৮ হাজার টাকা ব্যয়ে স্কুলকে ট্রেনের রূপ দেওয়া হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ১১৬ জন পড়ুয়া আছে। তাদের স্কুলের চারটি কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়। পড়ুয়াদের জন্য চারটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।’ চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া দীপান্বিতা দেবনাথ বলে ওঠে, ‘আমাদের স্কুলে আসতে ভীষণ ভাল লাগে। মাঝেমধ্যেই শ্রেণীকক্ষের দরজার সামনে দাড়িয়ে কুঁ ঝিকঝিক খেলায় মেতে উঠি আমরা।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলাইচন্দ্র প্রামাণিক জানান, ‘বিদ্যালয়ে ছয় জন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন। দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতির পর পড়ুয়াদের বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে নিয়েছিলাম। সেই ভাবনা থেকেই বিদ্যালয়ের ঘর সহ বারান্দাকে রঙের প্রলেপে একটি ট্রেনের রুপ দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার পেয়েছি। সহকর্মীদের মিলিত প্রচেষ্টায় স্কুল এগিয়ে চলছে।’