বালুরঘাট: বালুরঘাটের মঙ্গলপুর এলাকায় রয়েছে ট্রাক টার্মিনাস। যার ভেতরে আজ থেকে কয়েক দশক আগে বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরসভা তৈরি করেছিল মিনি কোল্ড স্টোরেজ। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি সেই হিমঘরের বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বালুরঘাট পুরসভার প্রধান অশোক মিত্র। যদিও এই ঘর বাম আমলে কার্যকর অবস্থায় ছিল বলে সাফ জানিয়েছেন প্রাক্তন আরএসপি পুর প্রধান সুচেতা বিশ্বাস। বর্তমানে ভুতুড়ে বাড়ির মতো দাঁড়িয়ে থাকা সেই হিমঘর নিয়ে নতুনভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে পুরসভা।
তখন ২০০২ সাল। বালুরঘাটে আরএসপির রমরমা। পুরসভায় ক্ষমতায় আসনে বামফ্রন্ট। সেই বছরে মে মাসের শেষের দিকে ডাঙ্গা গ্রামে জাতীয় সড়কের ধারে তৈরি করা হয়েছিল হিমঘর। বালুরঘাট থেকে হিলি যেতে খানপুর গ্রামের আগে বাঁদিকে রয়েছে ট্রাক টার্মিনাস। এর ভেতরেই লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে এই হিমঘরে কৃষি পণ্য মজুত রেখে কৃষকদের সাহায্য করাই লক্ষ্য ছিল। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে সেখানে কৃষিজাত দ্রব্য মজুত রাখার ক্ষেত্রে কৃষক থেকে শুরু করে পাইকার বা মজুতদার কারও কাছ থেকেই তেমন সাড়া মেলেনি। ফলে কার্যত সেই ভবন অবহেলায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। তৎকালীন বাম শাসিত রাজ্য সরকারের একটি প্রকল্পের আওতায় এই মিনি কোল্ড স্টোরেজ নির্মিত হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে বাউল গ্রামের ব্যবসায়ী এই ঘরকে লিজ হিসেবে নেন। তিনি পাঁচ থেকে ছয় মাস টানা সেই হিমঘর চালিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তারপরে আবার নতুন করে উদ্যোগ নিয়ে হিলির এক ব্যবসায়ীর কাছে এই হিমঘর হস্তান্তর করা হয়। তিনিও কিছুটা সময় এই হিমঘরের সুবিধা নেওয়ার পরে ছেড়ে দেন। তারপর থেকে টানা ২০ বছর এই হিমঘর কার্যত অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যদিও মাঝে একটা সময় পূর্ত বিভাগের তরফে সেখানে কাঁচামাল রাখা হত বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু এখন সেটা আর কৃষিদ্রব্য মজুত রাখার মতো পরিস্থিতিতে নেই। আবার সেখানে নতুনভাবে অন্য কিছু প্রকল্প চালু করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে বালুরঘাট পুরসভা।
এই বিষয়ে বালুরঘাটের পুরপ্রধান অশোক মিত্র বলেন, ‘বাম আমলে তৈরি এই হিমঘর উদ্বোধনের পরেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কারণ সেইভাবে ব্যবহারই হয়নি। পরপর দুজন সেই ঘর নিয়েও ছেড়ে দিয়েছেন। মাঝখানে পিডব্লিউ সেকশনের তরফে সিমেন্ট, লোহার রোড সহ যাবতীয় সরঞ্জাম রাখা হত। একপ্রকার গোডাউনে পরিণত হয়েছিল। এখন সেটিও নেই। ওই ভবন পুরসভার সম্পত্তি। এখন ওই হিমঘরের পরিস্থিতি আগের মতো নেই। এটা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা সেখানে আবার নতুন করে হিমঘর বা অন্য কোনো জনহিতকর প্রকল্প বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি করছি। আমরা ইতিমধ্যে এই প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি।’
যদিও উলটো সুর শোনা গিয়েছে বালুরঘাটের প্রাক্তন আরএসপির পুরপ্রধান সুচেতা বিশ্বাসের গলায়। তাঁর কথায়, ‘এই সরকার আসার পর থেকেই পুরোনো সমস্ত ভবন ও প্রকল্পের দেখভাল করছে না। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বরং যেগুলো অপ্রয়োজনীয় সেগুলোতে অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আমাদের সময় এই হিমঘর ব্যবহার করা হতো। কৃষকরা এখানে ফসল রাখতেন। এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।’