ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি : শিলিগুড়ি শহরে পানীয় জলের সমস্যা (Water crisis) এখনও সমাধান না হলেও দেদার সেই জল ব্যবহার করা হচ্ছে বহুতল নির্মাণের কাজে। পুরনিগমে শুধু একটু ‘জানাশোনা’ থাকলেই প্রোমোটারের নির্মীয়মাণ ভবনের জন্য এই পানীয় জল ব্যবহার করা কোনও ব্যাপারই নয়। কিছুদিন আগে পুরনিগমের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে এক প্রোমোটারের নির্মাণের ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পুরনিগমের পানীয় জলের ট্যাংক ব্যবহার করা হয়েছিল। তখন সেই ঘটনা নিয়ে শহরজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
এই ঘটনার কিছুদিন কাটতে না কাটতেই পুরনিগমের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের শরৎ বোস রোডে রাস্তার ধারে থাকা একটি ফাঁকা জমিতে প্রোমোটার বহুতল নির্মাণ (Construction work) শুরু করেছেন। সেই নির্মীয়মাণ বহুতলেও কাজে লাগানো হচ্ছে পুরনিগমের পানীয় জল। এদিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কিছুদিন আগেই পানীয় জলের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। সেই পানীয় জলের পাইপের সঙ্গে বড় পাইপ লাগিয়ে পানীয় জল, নির্মাণকাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
পুরো ঘটনায় স্তম্ভিত এলাকার অনেকেই। ম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী জানালেন, প্রোমোটারদের সঙ্গে শাসকদলের নেতা-নেত্রীদের খাতির থাকার ফলেই তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি জলের সংযোগও পেয়ে যান। আবার সেই জল নির্মাণকাজে ব্যবহার করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই হয় না। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে জলের সংযোগ দেওয়া হল? যেখানে অনেক জায়গায় এখনও পানীয় জলের সংযোগ পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে থাকতে হয়, সেখানে প্রোমোটারের জমি গর্ত করা শুরু হতেই কীভাবে জলের সংযোগ চলে আসে?
পুরো বিষয়টি নিয়ে পুরনিগমের অন্দরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন অনেকে। কখনও ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পানীয় জলের ট্যাংক আবার কখনও নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার মতো ঘটনায় অনেকেই পুরনিগমের একশ্রেণের কর্মীর সঙ্গে প্রোমোটারদের যোগসাজশের অভিযোগ তুলছেন। আর তা না হলে এইভাবে পানীয় জলের অপচয় হওয়ার কথা নয়। এদিন সকালে সূর্যনগর এলাকায় ওই নির্মাণ অংশে গিয়ে দেখা গেল, পুরনিগমের দেওয়া পাইপের সঙ্গে লম্বা পাইপ লাগিয়ে সেই জল নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কেন এইভাবে বারংবার জল সরবরাহ বিভাগ নিয়ে এরকম অভিযোগ উঠছে? ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনার পর মেয়র গৌতম দেব নির্দেশ দিয়েছিলেন, জলের ট্যাংক কেউ ভাড়া নিতে গেলে তাঁকে মুচলেকা দিতে হবে যে, তিনি ওই জল খাওয়ার জন্যই ব্যবহার করবেন। এখন জলের ট্যাংক ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে এই ধরনের নির্দেশই পালন করা হচ্ছে। শিলিগুড়ি পুরনিগমের জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পরিষদের সদস্য দুলাল দত্ত বলেন, ‘আমার কাছে এই নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে এখন যখন শুনছি তখন নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেব।’