কোচবিহার: গার্ডেনরিচ আতঙ্ক কোচবিহারেও। কোচবিহার শহরের বড় বাজার এলাকায় নৃপেন্দ্রনারায়ণ রোডের ধারে চারতলা একটি বহুতলের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত চওড়া ফাটল ধরেছে। বহুতলটি লাগোয়া একটি তিনতলা বাড়ির ওপর ঝুঁকে পড়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। আশপাশের বাসিন্দাদের দাবি, সাত-আট মাস ধরে তাঁরা এই ফাটলটি দেখছেন। তবে দুই–তিনদিনের বৃষ্টিতে সেই ফাটল বেড়ে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গিয়েছে। ফলে তাঁরা সবসময়ই আতঙ্কে রয়েছেন।
সম্প্রতি কলকাতার গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে বেশ কয়েকজন মারা যাওয়ার পাশাপাশি অনেকে আহতও হয়েছেন। কোচবিহারের বহুতলটির বর্তমানে যা অবস্থা তাতে এটিও যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। সমস্যার বিষয়ে কোচবিহার পুরসভাকে অবগত করা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। শনিবার এ বিষয়ে কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে জানতাম না। এদিনই জানতে পারলাম। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে রবিবার ঘটনাস্থলে যাব।’
সংশ্লিষ্ট বহুতলটির সামনের দিকে রাস্তার পাশে হার্ডওয়্যারের বড় দোকান রয়েছে। বাড়িটির পেছনের দিকের একটা অংশে ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত লম্বালম্বি ফাটল ধরেছে। বহুতলটি পাশের একটি তিনতলা বাড়ির দিকে বেশ কিছুটা ঝুঁকে পড়েছে। তিনতলা ওই বাড়িতে দুটো পরিবার থাকে। ওই পরিবারগুলির অন্যতম রূপনারায়ণ বণিক বললেন, ‘যেভাবে বহুতলটি আমাদের বাড়ির দিকে ঝুঁকে পড়েছে তাতে যে কোনও সময় সেটি ভেঙে পড়তে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। গার্ডেনরিচের ঘটনার পর আমাদের আতঙ্ক অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।’ তিনতলা বাড়িটির আরেক প্রবীণা বাসিন্দা নমিতা বণিকের কথায়, ‘পরিস্থিতির জেরে আমাদের সুখশান্তি উড়ে গিয়েছে।’ ব্যবসায়ী দীপঙ্কর বণিক ওই বহুতলটির আশপাশেই থাকেন। তিনি বললেন, ‘বহুতলটির সমস্যার বিষয়ে আমরা বহুবার সেটির কর্ণধারকে জানিয়েছি। কিন্তু দেখছি, দেখব বলে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি, বিষয়টি আমরা কোচবিহার পুরসভা, মহকুমা শাসককেও জানিয়েছি। এক্ষেত্রেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর জেরে আমাদের আতঙ্ক সমানে বাড়ছে।’ এলাকার আরেক ব্যবসায়ী অরুণজিৎ বণিকও বহুতলটির অবস্থায় তাঁদের আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। দ্রুত ব্যবস্থার দাবিতে অরুণজিৎরা সরব হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বহুতলটির অন্যতম কর্ণধার রণজয় বণিকের দাবি, ‘সমস্ত নিয়মকানুন মেনে ৪০ বছর আগে আমাদের বাড়িটি তৈরি করা হয়। এতদিন কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু বছর দুয়েক আগে তিনতলা বাড়িটি তৈরির পর থেকেই সমস্যার শুরু। পুরসভার নিয়ম মেনে ওই বাড়িটি তৈরি হয়নি। দুই ফুট জায়গা ছেড়ে বাড়ি তৈরির কথা বলা হলেও মাত্র ছয় ইঞ্চি ছেড়ে ওই বাড়িটি তৈরি করা হয়। বাড়িটির যখন দোতলা সম্পূর্ণ হয় তখনই গোটা বিষয়টি পুরসভাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। মাঝখান থেকে আমাদের বহুতলটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।’ গোটা পরিস্থিতির জেরে তাঁরাও খুবই আতঙ্কে রয়েছেন বলে রণজয় জানিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরালো হয়েছে।