জ্যোতি সরকার, জলপাইগুড়ি: জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করতে কালঘাম ছুটে যায় বর্মন দম্পতির। কিন্তু কী আর করবেন? ক্রেতাদের আবদার মেটাতে কাঠ বা আখাতেই রান্না করেন শোভা বর্মন ও কার্তিক বর্মন। জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় তাঁদের ছোটখাটো ভাতের হোটেল। তবে আকারে ছোট হলেও খদ্দেরের ভিড় লেগেই থাকে। দফায় দফায় আসতে থাকেন তাঁরা এই কাঠের আঁচে রান্নার স্বাদ নিতেই।
সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যেই উনুন জ্বালিয়ে দেন বর্মন দম্পতি। যাঁদের অফিস যাওয়ার আগে খেতে বসার তাড়া, সেইসব সরকারি-বেসরকারি চাকুরেরা সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই দোকানে উপস্থিত হয়ে যান। ক্রেতাদের জন্য ডাল, ভাত, তরকারি, মাছের ঝোল এবং চাটনি তৈরি হয়ে যায় তার আগেই। দোকানের দুই ধারে টেবিল পাতা রয়েছে। প্রতিদিন সেখানেই পাত পেড়ে বসে পড়েন কমল বর্মন, সুকান্ত বাসুনিয়া, পবিত্র দাস, শ্যামসুন্দর ঘোষরা। দোকানের মধ্যেই বড় টেবিল রয়েছে। টেবিলের উপরেই রান্নার সমস্ত উপকরণ সাজানো থাকে। রান্না করা খাবার রাখার জায়গাও রয়েছে। দামে সেসব খাবার যথেষ্ট সস্তা। ৬০ টাকায় মেলে মাছ-ভাত।
সকাল সাড়ে ৯টার পর সাড়ে ১০টায় খদ্দেরদের আরেক দল দোকানে আসে। তাঁদের চাহিদা অনুসারে মাছের পাশাপাশি মাংসও রান্না হয়। এখানেই শেষ নয়। দুপুর ৩টে অবধি আরও ৩ দফায় আসেন খদ্দেররা। যদি রান্না করা খাবার শেষ হয়ে যায়, তবে আবার রান্না চাপাতে হয়।
এই কাঠের আঁচে রান্না করার জন্যই যে হোটেলের এত সুনাম, বিলক্ষণ জানেন শোভা। বললেন, ‘প্রায়ই ক্রেতাদের প্রশ্ন শুনতে হয়, আখাতে রান্না হয়েছে তো? আমাদের কাঠ সংগ্রহ করতে কালঘাম ছুটে যায়। জ্বালানি কাঠ এখন পাওয়া বড় শক্ত। তবে ক্রেতাদের কথা ভেবে কষ্ট হলেও জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করি।’
একই কথা শোনা গেল কার্তিকের মুখেও। তাঁরা ক্ষুধার্ত কাউকেই ফেরাতে চান না। বলছেন, ‘কষ্ট হয়। তবে ক্রেতাদের প্রত্যেকের ভালোবাসা আমাদের কাজ করতে উৎসাহ দেয়। স্ত্রীকে রান্নার কাজে আমি সহায়তা করি। খাবার পর ক্রেতাদের মুখে তৃপ্তির যে হাসি দেখা যায়, তা দেখেই আমরা খুশি।’
ষাটের ঘরে বয়স বিমল রায়ের। তিনি এই হোটেলের নিয়মিত খদ্দের। জানালেন, ছোটবেলায় বাড়িতে কাঠের উনুনে মা-ঠাকুমার হাতের রান্না খেয়ে অভ্যাস। গ্যাসের রান্নায় সেই স্বাদ নাকি পান না। বললেন, ‘প্রতিদিন কাজ করতে জলপাইগুড়ি শহরে আসি। এখানে খেলে মা-ঠাকুমার হাতের রান্নার কথা মনে পড়ে যায়।’