Friday, March 29, 2024
HomeBreaking Newsসৎ মায়ের মৃত্যু! গোপনে দেহ বাড়িতেই কবর দিল মেয়ে

সৎ মায়ের মৃত্যু! গোপনে দেহ বাড়িতেই কবর দিল মেয়ে

জলপাইগুড়িঃ সৎ মায়ের মৃতদেহ বাড়ির সীমানার মধ্যে পুঁতে দিল মেয়ে। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন পাহাড়পুর গ্রামপঞ্চায়েতের জমিদার পাড়া এলাকায়। মৃত মহিলার নাম লক্ষ্মী মাঝি (৫৮)। এলাকাবাসীদের অভিযোগ দীর্ঘ দিন ধরে সৎ মায়ের ওপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চলাতেন পিংকি মাঝি। এলাকাবাসীদের অনুমান শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালানোর কারণে মৃত্যু হয়েছে লক্ষ্মীর। গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই নিজের বাড়ির উঠনে প্রায় ছয় ফুট গর্ত খুঁড়ে মৃতদেহ পুঁতে দিয়েছে পিংকি স্থানীয়দের অভিযোগ। অন্যদিকে পিংকির দাবি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর মা অসুস্থ ছিলেন। দিন ২০ আগে একদিন কাজ থেকে ফিরে দেখতে পান মা মৃত। প্রতিবেশি এবং প্রশাসনকে কিছু না জানিয়ে নিজেই বাড়ির এলাকার মধ্যে গর্ত খুঁড়ে মায়ের মৃতদেহ পুঁতে দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন পিংকি। কিন্তু কেন এমনটা করলেন তিনি? উত্তরে তিনি বলেন, মায়ের মৃত্যুর পর মাথা কাজ করছিল না। যেকারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।‘ এমনই একটি রহস্য জনক ঘটনাকে কেন্দ্র মৃত্যুর কারণ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এদিন মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। অন্যদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিংকিকে থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।

জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গনপথ বলেন, ‘জমিদার পাড়া এলাকায় এক বাড়ির ভেতর মাটি খুঁড়ে এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যদি অস্বাভাবিক কিছু থাকে সেই অনুযায়ী মামলা হবে। তবে কেন মৃতদেহ পুঁতে দিলেন মহিলার মেয়ে তা তদন্ত করে দেখা হবে।‘

জানা গিয়েছে, শহর সংলগ্ন গোমস্তাপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন লক্ষ্মী মাঝি এবং তাঁর স্বামী অশোক মাঝি। অশোক পিংকির আপন বাবা। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় অশোকের। ওই ঘটনার পর পিংকি তার সৎ মা লক্ষ্মীকে জমিদার পাড়ার বাড়িতে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। সেখানে তিনি, তাঁর সাত বছরের সন্তান, বোন রিংকি মাঝি এবং মা লক্ষ্মী মাঝি বর্তমানে থাকতেন। পিংকি পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। স্থানীয় সূত্রে খবর বাবার মৃত্যুর পর সৎ মাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকেই শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চালাতেন পিংকি। প্রতিদিন কাজে যাওয়ার সময় লক্ষ্মীকে ফাঁকা বাড়িতে তালা বন্ধ করে দিয়ে যেতেন তিনি। পাড়া প্রতিবেশিদের সঙ্গে লক্ষীকে মেলামেশা করতে দিতেন না মেয়ে পিংকি। লক্ষ্মীকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করার শব্দ নিয়মিত প্রতিবেশিদের কানে আসতো। প্রতিবেশিরা প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন পিংকি বলে অভিযোগ। গত কয়েক দিন ধরে পিংকির বাড়িতে কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছিলেন না প্রতিবেশিরা। এমনকি লক্ষ্মীকেও গত কয়েকদিন ধরে দেখা যায়নি বলে দাবি স্থানীয়দের। লক্ষ্মীকে দেখা না যাওয়া এবং তার কোন সাড়া শব্দ না পাওয়ায় সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেই সঙ্গে পিংকির বাড়ির ভেতর থেকে পচা গন্ধ নাকে আসে এলাকাবাসীর। গোটা ঘটনাটি স্থানীয়দের কাছে সন্দেহ জনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান বেনুরঞ্জন সরকারকে সঙ্গে নিয়ে কোতয়ালি থানায় যান স্থানীয়রা। সেখানে এলাকাবাসীর তরফে লক্ষীর আচমকাই নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া এবং পিংকির বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ আসার বিষয়টি তদন্ত করতে দেখতে লিখিতভাবে জানানো হয়।

এদিন দুপুরে কোতয়ালি থানার পুলিশ পিংকির বাড়িতে যায়। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যর উপস্থিতিতে একটি সদ্য মাটি চাপা দেওয়া পাঁচ ফুট লম্বা গর্ত নজরে আসে পিংকির। সেই সময় পিংকি বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ফোন করে বাড়িতে ডেকে আনে। সাইকেলটি বাড়ির বাইরে রেখে কাউকে কিছু না বলে ঘরের ভেতর ঢুকে যায় পিংকি। এরপর পুলিশের ডাকাডাকিতে বাইরে বেরিয়ে আসে সে। তাঁর মা লক্ষী মাঝি প্রসঙ্গে পুলিশ অফিসার প্রশ্ন করতেই পিংকি জানায় মা কিছু দিন আগে মারা গিয়েছেন। এরপর মৃতদেহ সৎকারের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই পিংকি বাড়ি এলাকার মধ্যে সেই সদ্য মাটি চাপা দেওয়ার জায়গাটির দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে জানায়, মাকে সেখানে তিনি পুঁতে দিয়েছেন। এমনকি নিজে সেখানে প্রায় আট ঘন্টা ধরে গর্ত খুড়েছে সেটাও স্বীকার করেছে পিংকি। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর খবর প্রতিবেশি, স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং পুলিশ না জানিয়ে কেন নিজেই মাটি চাপা দিল? উত্তরে পিংকি বলেন, ‘আমার সঙ্গে প্রতিবেশিদের সুসম্পর্ক নেই। আর বাড়িতে এসে যখন দেখেছি মা মারা গিয়েছেন তখন মাথা ঠিক রাখতে না পেরে গর্ত খুঁড়ে পুতে দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছি।‘ সে জানিয়েছে মৃতদেহের ওপর ৩কেজি লবন ছড়িয়ে দিয়ে মাটি চাপা দিয়েছেন।

এদিন খবর জানাজানি হতে পিংকির বাড়িতে ভীড় জমান স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান কোতয়ালি থানার আই সি অর্ঘ্য সরকার। পুলিশের তরফে মাটি খুঁড়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা চিনু রায় বলেন, ‘আমরা প্রায়শই শুনতে পেতাম পিংকি তার মাকে মারধর করছে। শুধু শারীরিক নিগ্রহ নয়, খালি বাড়িতে তালা বন্ধ করে রেখে দিয়ে কাজে চলে যেত পিংকি। এমন অনেক দিন হয়েছে লক্ষ্মীকে খেতে পর্যন্ত দিতো না সে। আমাদের অনুমান শারীরিক মানসিক নির্যাতন থেকেই কোন একটা ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করলেই সমস্তটা প্রকাশ পাবে।‘

Sandip Sarkar
Sandip Sarkarhttps://uttarbangasambad.com/
Sandip Sarkar Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 22 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img
[td_block_21 custom_title="LATEST POSTS"]

Most Popular