রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়িঃ পাহাড়ে বিভিন্ন জনজাতির জন্য উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছে রাজ্য সরকার। সেগুলোর মাধ্যমে প্রচুর টাকা বরাদ্দ করলেও ভোটবাক্সে এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ফল পায়নি শাসকদল। বোর্ডগুলো অবশ্য বরাবর রাজ্যের পাশে থাকার দাবি করেছে। কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে এদের অন্তঃকলহের জেরে অস্বস্তিতে তৃণমূল। অধিকাংশ বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পুনর্নবীকরণ না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে পাহাড়ে।
শনিবার কালিম্পংয়ে তামাং ইউথ অ্যাসোসিয়েশন তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামার সমর্থনে র্যালি করে। সেখান থেকে দ্রুত তামাং উন্নয়ন বোর্ডের নতুন কমিটি তৈরির দাবি জানানো হয়। আবার এই দাবি নিয়েও তামাং বোর্ডের অন্দরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তামাং উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সঞ্জয় মোক্তান বলছেন, ‘আমরা অরাজনৈতিক সংগঠন। তৃণমূলকে আমরা প্রত্যেক নির্বাচনে সমর্থন করে আসছি। কিন্তু এভাবে রাস্তায় নেমে কোনও প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আবেদন করা যায় না।’
২০১২ সাল থেকে পাহাড়ের উন্নয়নে একে একে ১৫টি উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। প্রথমে লেপচা, তারপরেই তামাং বোর্ড হয়। এরপর একে একে অন্যান্য জনজাতির বোর্ড গঠন করে সেগুলোর মাধ্যমে বাসিন্দাদের ঘর নির্মাণ, পানীয় জলের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট তৈরির কাজ করা হয়েছে। প্রতিটি বোর্ডের মেয়াদ পাঁচ বছরের। পাঁচ বছর পরপর প্রত্যেকটি বোর্ডের পুনর্নবীকরণ করার কথা নির্দেশিকায় বলা রয়েছে। কিন্তু ২০২২ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে আর কোনও বোর্ডের পুনর্নবীকরণ করা হয়নি।
লেপচা বোর্ডের চেয়ারম্যান এলএস তামসাং প্রয়াত হওয়ায় সেই বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে কালিম্পংয়ের বিধায়ক রুদেন সাদা লেপচাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, এখনও পূর্ণাঙ্গ লেপচা বোর্ড তৈরি হয়নি। এই অবস্থায় মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া বোর্ডগুলোর হাতে টাকা না থাকায় উন্নয়নমূলক কাজকর্ম থমকে রয়েছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, বোর্ডগুলো অফিসের ভাড়া মেটানো থেকে কর্মীদের বেতন, এমনকি বিদ্যুৎ বিল পর্যন্ত ঠিকমতো দিতে পারছে না। এমনটাই বক্তব্য বোর্ড চেয়ারম্যানদের। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে। এই ঘটনা রাজ্যের শাসকদলের কাছে রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার কালিম্পংয়ে তামাং ইউথ অ্যাসোসিয়েশনের তরফে একটি র্যালি করা হয়। কালিম্পংয়ের ডম্বরচক থেকে শুরু হওয়া র্যালি থেকে গোপাল লামাকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। এই র্যালির শেষে তামাং ইউথ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সোনম ওয়াংদি তামাং বলছেন, ‘তামাং জনজাতিকে রাজ্য সরকার অনেক সমর্থন করেছে। তবে, তামাং বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেড় বছর কেটে গিয়েছে। ফলে কাজকর্ম সব স্তব্ধ। আমরা চাই তামাংদের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে এবং পুরানো বোর্ডের লোকজনকে সরিয়ে নতুন করে বোর্ড তৈরি করা হোক।’