সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি: আবিরের রং সবুজ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে পালং শাকের রস। গোলাপি, গেরুয়া বা লাল আবির তৈরিতে দেওয়া হচ্ছে বিট, গাজর ও গোলাপের পাপড়ির রস। এমনই উপকরণ দিয়ে এবার ভেষজ আবির তৈরি করছেন জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলার সদর ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী নমুনা হিসেবে এই ভেষজ আবির তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সুগন্ধি এবং গুণগতমান যে কোনও নামীদামি কোম্পানির ভেষজ আবিরকে টেক্কা দেওয়ার মতো বলে দাবি করছেন মহিলারাই। ব্যবসায়ীদের কাছে আবিরের নমুনা তুলে ধরে অর্ডার নেওয়া কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
মহিলাদের তৈরি এই ভেষজ আবির বাজারজাত করার দায়িত্ব নিয়েছে ব্লক প্রশাসন। যাঁর উদ্যোগে মহিলারা প্রশিক্ষণ নিয়ে এই ভেষজ আবির তৈরি করছেন, তিনি হলেন সদর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) মিহির কর্মকার। তিনি বলেন, ‘এই ভেষজ আবির বিক্রির জন্য আমরা শহরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছি। এটা ‘অঙ্গনা’ আবির নামে বাজারে বিক্রি হবে। আশা করছি আবিরের গুণগত মান যা রয়েছে তাতে ভালো চাহিদা হবে।‘
মাসখানেক বাদেই দোল উৎসব (Dol Purnima)। ইতিমধ্যে দোল উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের রং এবং আবির মজুত করতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছরে ভেষজ আবিরের চাহিদা বেড়েছে বাজারে। এর আগে বন দপ্তরের তরফে জলপাইগুড়ির বাজারে এসেছিল ভেষজ আবির। এবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা তৈরি করছেন এই ভেষজ আবির। সদর ব্লকের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংঘের মহিলাদের আবির তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা। সংঘের মহিলারা প্রশিক্ষণ পেয়ে তাঁরা আবার বাকি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের এই আবির তৈরির পদ্ধতি হাতেকলমে শিখিয়েছেন।
এক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যার ঘরে গিয়ে দেখা গেল, পালং শাক, থানকুনি পাতা, গাজর, বিট এবং গোলাপ ফুলের পাপড়ি মজুত করা রয়েছে। কীভাবে তৈরি হচ্ছে এই ভেষজ আবির? প্রশ্ন করতেই মিক্সার গ্রাইন্ডার মেশিনে পালং শাক দিয়ে সেগুলো পিষে নিলেন। তারপর সেখান থেকে রস ছেকে বের করে অ্যারারুট পাউডারের সঙ্গে মেশালেন। সুগন্ধির জন্য মেশালেন গোলাপ জল। তাঁরা জানালেন অ্যারারুটকে এভাবে রং করে সেটাকে রোদে খুব ভালো করে শুকোতে হয়। তারপর আরও একবার চালনিতে ছেঁকে নিলে ভেষজ আবির পাওয়া যায়।
ছায়া দাস নামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক মহিলা বলেন, ‘আমাদের ভেষজ আবির তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আপাতত নমুনা হিসেবে প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ১০ কেজি করে আবির তৈরি করেছে। এই নমুনা ব্যবসায়ীদের দেখিয়ে অর্ডার নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীরা যত পরিমাণ চাইবেন আশাকরি আমরা সেই অনুযায়ী জোগান দিতে পারব।’ জানা গিয়েছে, এই ‘অঙ্গনা’ আবির বিক্রির সময় গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করতে দোকানের পাশে বড় ফ্লেক্সে আবির তৈরির পদ্ধতির ছবি প্রিন্ট করে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলগুলিতেও এই আবির মিলবে বলে ব্লক প্রশাসনের (Administration) তরফে জানানো হয়েছে।