প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: রাজধানী দিল্লি ও এনসিআর মিলিয়ে ৫০০’র বেশি দুর্গাপুজো হয়ে থাকে এই সাবেকি শহরে। শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজোর সংখ্যাও দিল্লিতে কম নয়। তার মধ্যে এবার দিল্লি প্রবাসী বঙ্গসমাজের আবালবৃদ্ধবনিতার নজর কেড়েছে পাহাড়গঞ্জ অঞ্চলে স্থিত রামকৃষ্ণ মিশন। স্বয়ং বিবেকানন্দ এবং একাধিক খ্যাতনামা ব্যক্তির স্পর্শধন্য এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৯৬ বছর পর নতুন ইতিহাস রচনা করতে চলেছে। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৯৬ বছর পর এই প্রথম দিল্লির রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গাপুজো হবে পূর্ণাঙ্গ প্রতিমায়। এতদিন সেখানে ঘটপুজো হতো এবং শুধুমাত্র অষ্টমীর দিনে সংক্ষিপ্তভাবে ছবিতে পুজো করা হত। প্রথমবার সেই প্রথা ভেঙে এবারের দুর্গাপুজোয় মৃন্ময়ী প্রতিমার আবাহন করে নতুন পথচলা শুরু করতে চলেছে দিল্লির রামকৃষ্ণ মিশন।
মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জন্মাষ্টমীর পুণ্যতিথিতে দুর্গাপ্রতিমার কাঠামো পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছে এখানে। প্রথম প্রতিমা পুজোর আনন্দে তাই রামকৃষ্ণ মিশনে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসাবে মণ্ডপ বাঁধা এবং প্রতিমা তৈরির কাজ। স্বাভাবিকভাবেই তুমুল ব্যস্ততা আশ্রমের আবাসিকদের মধ্যেও। দিল্লি রামকৃষ্ণ মিশনের সচিব সর্বলোকানন্দজি মহারাজ জানিয়েছেন, ভক্তদের দীর্ঘদিনের অনুরোধ, উৎসাহ এবং ইচ্ছাতেই এবারে প্রথম মূর্তিপুজোর সূচনা হচ্ছে দিল্লির পাহাড়গঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনে। রামকৃষ্ণ মিশনের এই নব্য উদ্যোগ ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে দিল্লিজুড়ে। সংশ্লিষ্ট মিশনের আবাসিকরা মনে করছেন, পুজোর চারদিন জলপ্লাবিত হতে পারে মিশন চত্বর। ইতিমধ্যেই সে বিষয়টি সামাল দিতে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে আগাম কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা।
প্রত্যাশিতভাবেই মিশনের এই সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত ভক্তরা সকলেই নিজেদের মতো করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তৈরি করা হচ্ছে দেবীর বেদি। মিশনের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে বাঁ দিকে তৈরি করা হচ্ছে বেলুরমঠের ধাঁচে এক চালার মৃন্ময়ী মূর্তি। বসিরহাটের সিকরা গ্রাম থেকে আসছেন পুজোর পুরোহিত। উল্লেখ্য, এই শিকরা গ্রামেই স্বামী ব্রহ্মানন্দের জন্মস্থান যিনি নিজে একসময় ছিলেন এই মিশনের দায়িত্বে। এছাড়াও বীরভূম থেকে আসছেন ঢাকিরা। পুজোর আনুষঙ্গিক জিনিস আসছে কলকাতা এবং দিল্লির ‘মিনি কলকাতা’ হিসেবে খ্যাত চিত্তরঞ্জন পার্ক থেকে। পুজোর চারদিন থাকছে সবার জন্য ভোগ, প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা।
মিশনের সম্পাদক স্বামী সর্বলোকানন্দ মহারাজ বলেন, ‘রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের মোট ১৯টি শাখায় বর্তমানে দুর্গোৎসব হয়। দিল্লির রামকৃষ্ণ মিশনেও পুজো হত, তবে তা ঘটের আকারে। মিশনের তরফে আমাদের অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল পূর্ণাঙ্গ মাতৃ প্রতিমায় দুর্গাপুজো করার। সম্প্রতি আমি রামকৃষ্ণ মিশনের এই শাখার সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই সেই সিদ্ধান্তটিকে বাস্তবায়িত করতে পেরেছি।’ তিনি এও জানান, প্রতিমাপুজো শুরু করার সিদ্ধান্তের আগে বেলুড় মঠের কাছে অনুমতি চেয়ে জরুরি আবেদন করা হয়। এরপরেই খুব দ্রুত সেখান থেকে অনুমতি আসে। মিশনের তরফে জানানো হয়, বাহ্যিক আড়ম্বর নয়। সকলের মধ্যে শুভশক্তির আহবান করাই এখানের পুজোর মাহাত্ম্য। তবে রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী সর্বলোকানন্দ মহারাজ জানান, সমাজে আসুরিক প্রবৃত্তির মানুষেরা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ছে। তাই বাহ্যিক আড়ম্বরে নয় সেই আসুরিক শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির আরাধনাই হেতু মৃন্ময়ী মাতৃ আরাধনার মূল উদ্দেশ্য।