উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ জ্যোতিপ্রিয়র মেয়ে প্রিয়দর্শিনী নাকি টিউশন পড়িয়ে উপার্জন করেছেন ৩.৩৭ কোটি টাকা। অথচ শিক্ষকতা করে জ্যোতিকন্যার বার্ষিক আয় মাত্র ২.৪৮ লক্ষ টাকা। এই তথ্য সামনে আসতেই মাথায় হাত ইডি আধিকারিকদের। স্বভাবতই রবিবার রেশন দুর্নীতির তদন্তে সিজিও কমপ্লেক্সে ডাক পড়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিকের। তাঁর আয় ব্যয়ের যাবতীয় নথি জমা করে সামান্য সময়ের মধ্যেই ইডি দপ্তর থেকে গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যান তিনি। আর কী কারণে আজ সিজিও-তে এসেছেন তা জানতে চাইলে কার্যত মেজাজ হারান মন্ত্রীর মেয়ে। সাংবাদিকদের রীতিমত ধাক্কা দিয়েই সটান গাড়িতে উঠে পড়েন।
রেশন দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার মাঝরাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমানে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এই দুর্নীতির তদন্তে নেমে ১১টি চাল কলে তল্লাশি চালায় ইডি আধিকারিকরা। সেখান থেকেই নাকি জানা গিয়েছে, একাধিক ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমে রেশনের নয়-ছয়ের কালো টাকা সাদা হয়েছে। ইডির দাবি, সেই সব ভুয়ো কোম্পানি নিজের স্ত্রী, পরিবারের সদস্য এবং বাকিবুরের মতো ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে চালাতেন জ্যোতিপ্রিয়। মোট ৯৫ কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে। এই আবহে শনিবারই জ্যোতিপ্রিয় সহ পরিবারের বেশ কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। এরপরই বালুর স্ত্রী এবং মেয়ে প্রিয়দর্শিনীর উপার্জনের ওপরও দৃষ্টি দেয় তদন্তকারীরা। এই আবহে আয়কর রিটার্নের নথি খতিয়ে ইডি জানতে পেরেছে, জ্যোতিপ্রিয়র মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিকের রোজগার ৩.৩৭ কোটি টাকা। এই টাকার পুরোটাই উপার্জন করেছেন টিউশন পড়িয়ে।
জানা গিয়েছে, পেশায় প্রিয়দর্শিনী কলেজের সহকারী অধ্যাপক। ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখায় রয়েছে তাঁর একটি অ্যাকাউন্ট। আয়কর রিটার্নের নথি খতিয়ে দেখে ইডি জানতে পেরেছে, ২০১৬ সালে প্রিয়দর্শিনীর অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। যদিও তাঁর আয়ের সঙ্গে ব্যাঙ্কে থাকা টাকার কোনওরকম সংগতি নেই। এদিকে বালুর স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট রয়েছে আইডিবিআইতে। সেখানে ৪.৩ কোটি টাকা রয়েছে।
কয়েক মাস আগেই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কন্যা প্রিয়দর্শিনী মল্লিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব পদে। তিন বছর তিনি সচিবের দায়িত্ব সামলাবেন বলে নির্দেশিকায় জানিয়েছিল স্কুল শিক্ষা দপ্তর। এর আগে প্রিয়দর্শিনী আশুতোষ কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেপ্তারির পর জানা যায়, শান্তিনিকেতনে একটি বাড়ি কিনেছিলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। শান্তিনিকেতনে জ্যোতিপ্রিয়র বাড়ির নাম ‘দোতারা’। অভিযোগ, প্রায় ছ’কোটি টাকা মূল্যের ‘দোতারা’ নামক বাড়িটি কিনেছিলেন প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা খরচ করে। যদিও দোতারার ক্রয়মূল্যের পরিমান দেড় কোটি টাকা বলেও দাবি করেছেন অনেকেই। তবে এই বাড়ি জ্যোতিপ্রিয়র নামেই আছে নাকি সেটি অন্য কারও নামে আছে, তা স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি।