নাগরাকাটা: সময়ে অসময়ে ঢুকে পড়া মারমুখী হাতি সামলানো। কিংবা বন সুরক্ষা। সবেতেই নাগরাকাটার বিস্তীর্ণ এলাকার মসিহা হয়ে ওঠা বিট অফিসার স্বপন সেনের অবসরে চোখে জল স্থানীয় বাসিন্দা, বন বস্তীবাসী ও বনকর্মীদের। ডায়না রেঞ্জের অন্তর্গত ক্যারন বিটের ওই বন আধিকারিক এলাকার ভূমিপুত্র হওয়ার সুবাদে এলাকার আট থেকে আশি প্রত্যেকের কাছে পরিচিত ছিলেন স্বপন দা হিসেবে। গত শুক্রবার তিনি দীর্ঘ ৩৮ বছরের কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। শনিবার সন্ধ্যায় সুলকাপাড়ার বন বাংলোয়া আয়োজিত তাঁর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একদিকে যেমন কেঁদেছেন স্বপন বাবু নিজে, অন্যদিকে বাঁধভাঙা চোখের জল দেখা গিয়েছে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেকের চোখেই। তিনি বলেন, ‘বনই ছিল আমার ঘরবাড়ি। এই বন্ধন আমৃত্যু রেখে যেতে চাই। ডায়না রেঞ্জের রেঞ্জার অশেষ পাল বলেন, বন ও বন্যপ্রাণ সুরক্ষায় স্বপন সেনের অবদান কখনো ভোলার নয়। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ওই বিট অফিসার যদি ভবিষ্যতেও আমাদের সাহায়্য করেন তবে খুব ভালো হয়। ‘
এক সময়ে ডুয়ার্সের ময়দান কাঁপানো ফুটবলার স্বপন ১৯৮৫ সালে অস্থায়ী দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে বন শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত হন। ধীরে ধীরে নিজের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রথমে স্থায়ী বন শ্রমিক ও পরে ফরেস্ট গার্ড ও শেষে বিট অফিসার হিসেবে পদোন্নতি পান। ডায়না রেঞ্জের অন্তর্গত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হাতির উতপাত বছর ভরেরই। রয়েছে বাইসন, চিতাবাঘের আনাগোণাও। আপার কলাবাড়ি, হৃদয়পুর, প্রয়াগপুর, জ্বালাপাড়া, ডুডুমারির মতো বন বস্তীর পাশাপাশি রেড ব্যাংক, ধরণিপুর, দেবপাড়া, ডায়না, চ্যাংমারি, গাঠিয়া, গ্রাসমোড়, লুকসানের মতো বাগানগুলির বাসিন্দারা বিপদে পড়লেই খবর দিতেন তাঁকে। নিজেই গাড়ি কিংবা বাইক চালিয়ে বন্দুক হাতে আরো দু একজন কর্মীকে সাথে নিয়ে তাঁকে প্রতি সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়তে দেখেন নি এমন কেউ এলাকায় নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বুনোদের সুরক্ষিত রেখে বাসিন্দাদের ফসল কিংবা সম্পদ হানির মোকাবিলা করতে দেখা গেছে তাঁকে। ওই অনুষ্ঠানে ডায়না রেঞ্জের অন্তর্গত খেরকাটা বিটের কাজল দেবনাথ, টোলগেট বিটের লাল্টু সূত্রধর, সুলকাপাড়া বিটের বিশাল মজুমদারের মতো বিট অফিসারদের পাশাপাশি চালসা রেঞ্জের রেঞ্জার প্রকাশ থাপা, পানঝোড়া বিটের বিট অফিসার দিলীপ রায় প্রমুখ। চা বাগান ও বনবস্তীতে মানুষ-বুনোর সংঘাত প্রশমিত করতে ধারাবাহিকভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া ডুয়ার্স জাগরণের কর্ণধার ভিক্টর বসু বলেন, ‘স্বপন বাবুর মতো কর্মীরা বন দপ্তরের সম্পদ। আশা করছি তিনি জঙ্গলঘেরা এই এলাকার স্বার্থে তাঁর মতো করে কাজ চালিয়ে যাবেন।‘