সুভাষ বর্মন, পলাশবাড়ি: মঙ্গলবার সকালে রং খেলার দিন চাষাবাদের ক্ষেত্রে রদবদলের ছবি দেখা গেল পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। পেশায় চাষি বছর পঁয়তাল্লিশের রণজিৎ বর্মনের বাড়িতে পনেরো বছর আগেও বলদ ছিল। চাষের কাজে বলদ লাগানো হত। এখন বলদ নেই। ট্র্যাক্টর দিয়েই বেশিরভাগ জমি চাষ করান তিনি। তবে বাড়িতে লাঙল-জোয়াল এখনও আছে। খরচ বাঁচাতে ট্র্যাক্টর দিয়ে জমি চাষ করার পর এদিন সকালে এক বিঘা জমিতে পাটের বীজ ফেলেন তিনি। তারপর মইয়ের উপর কলা গাছ রেখে আরেকজন শ্রমিক নিয়ে দুজনে দড়ি দিয়ে টেনে জমি সমান করেন। দুপুরে রং খেলায় শামিল হন দুজন। রণজিৎ শুধু একা নন, আশপাশের আরও অনেক চাষিকেই এদিন জমিতে এমন কাজ করতে দেখা যায়।
গ্রামবাংলার চাষের ক্ষেত্রে চেনা ছবিটা এখন উধাও। এদিন বুড়িতোর্ষা নদীর আশপাশের মেজবিল, পারপাতলাখাওয়া, বালাসি এলাকাতেই মানুষকে মই টানার কাজ করতে দেখা গেল। যদিও এখন পাটের চাষ খুব কম হয়। বেশিরভাগ জমিতে ভুট্টার চাষ হয়। তবে সম্প্রতি হালকা বৃষ্টি হওয়াতে জমি ভিজেছে। তাই যাঁরা পাট চাষ করবেন, তাঁরা এখনই জমি তৈরি করে বীজ বুনছেন। ক’বছর আগেও বলদ দিয়ে জমি তৈরি করতেন চাষিরা। এখন আর তা হয় না। এজন্য এলাকার প্রবীণ চাষিদের মুখেও আক্ষেপের সুর। ভবেশ্বর বর্মন নামে বছর পঁচাত্তরের চাষির কথায়, ‘গোরুর হাল না থাকায় বাড়িতে বাড়িতে আর জৈব সার হিসেবে গোবর মেলে না। আবার খুব সকালে উঠে জমি গোরু দিয়ে চাষ করলে শরীরচর্চাও হয়। সুস্থ থাকা যায়। সেসব এখন আর হয় না।’ বরং ট্র্যাক্টর দিয়ে চাষ করে বেশি করে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির ক্ষতি হচ্ছে।
কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে মেনে নিয়েও যেন কেউ কেউ পুরোপুরি মানতে পারছেন না। মেজবিলের রণজিৎ বর্মন জানান, ট্র্যাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে নিয়েছি। পাটের বীজ বুনে দেওয়ার পর জমি সমান করতে হয়। সেই কাজ ট্র্যাক্টর দিয়ে করলে খরচ বেড়ে যাবে৷ তাঁর কথায়, ‘বাড়িতে বলদ নেই। কিন্তু মই আছে। তাই আরেকজন শ্রমিক নিয়ে মইয়ের উপর কলা গাছ ফেলে দুজনে মিলে জমি সমান করে দিলাম।’
বালাসি এলাকার কলেন বর্মনও একইভাবে এদিন জমিতে মই টানেন। পরিতোষ বর্মন, গুরুচরণ বর্মনদের জমিতেও একই ছবি। কলেন বলেন, ‘বাড়িতে এখন হালের বলদ নেই৷ পাট চাষ করলে শুরুতেই এভাবে জমি সমান করে দিতে হয়। তাই নিজেই বলদের ভূমিকায় মই টানলাম।’ এভাবে চাষের কাজ সেরে সবাই অবশ্য রং খেলায় মেতে ওঠেন।