শুভ্রজিৎ বিশ্বাস, মেখলিগঞ্জ: আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে একটা সময় ছিল যখন সন্ধ্যার খাবার বলতে নারকেল মুড়ি, দুধ মুড়ি প্রভৃতি খাবারকে প্রাধান্য দেওয়া হত। দিন বদলেছে। সেইসঙ্গে সন্ধ্যা নামলেই দলে দলে টিউশন, কোচিং সেন্টার ফেরত পড়ুয়াদের রাস্তার ধারে থাকা ফাস্ট ফুডের (Fast food) দোকানে ভিড় জমানোর ছবিটা খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম্য এলাকার জন্য।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ব্যবসা করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স (Trade License) থাকা বাধ্যতামূলক। সেইসঙ্গে খাবারের দোকান চালাতে হলে প্রয়োজন ফুড লাইসেন্স (Food License)। কিন্তু সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেখলিগঞ্জ পুরসভার গোটা হাসপাতালপাড়া থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালীপাড়া, মেখলিগঞ্জ বাজারের আনাচে-কানাচে, দাসপাড়া এলাকায় দিনের পর দিন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ফাস্ট ফুডের দোকান।
এইসব বিক্রেতার প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ ব্যবসায়ীর কাছে ট্রেড লাইসেন্স বা ফুড লাইসেন্স নেই। ফলে দিনের পর দিন কর ফাঁকি দিয়ে দিব্যি চলছে ব্যবসা। এর আগে মেখলিগঞ্জ পুরসভা, খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের (Food Safety Department) তরফে শহরে যতবার খাদ্যের মান যাচাই করতে অভিযান হয়েছে ততবার ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স ও বিশেষত ফুড লাইসেন্স তৈরি করার বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে।
তারপরেও হুঁশ ফেরেনি একাংশ ব্যবসায়ীর। এই নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত অভিভাবক মহলের একাংশও। শহরের সচেতন অভিভাবিকা পুষ্পা ঠাকুর বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা টিউশন থেকে ফেরার পথে ফাস্ট ফুডের দোকানে ভিড় জমায়। কিন্তু তারা টাকা খরচ করে যা খাচ্ছে তার গুণগতমান কেমন বা সেই ব্যবসায়ীর সেই দোকান করার অনুমতি রয়েছে কি না তা আমরা জানি না। তাই বিষয়টি পুরসভা, খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের দেখা উচিত।’
মেখলিগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক রাধেশ্যাম লাখোটিয়া বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ফুড লাইসেন্স হচ্ছে না। পুরসভার তরফে ব্যবসায়ীদের বলা হচ্ছে। হাসপাতাল মোড়েও একটি ক্যাম্প হয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্যেও একটি ক্যাম্প করার দাবি জানাই।’
মেখলিগঞ্জের খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতাল মোড় এলাকায় ইতিমধ্যেই ক্যাম্প করা হয়েছে। এলাকার যাঁদের কাছে ট্রেড লাইসেন্স নেই তাঁরা এপ্রিল মাসের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স ও ফুড লাইসেন্স নেওয়ার জন্য লিখিত দিয়েছেন। এরকম আরও ক্যাম্প ও অভিযান মেখলিগঞ্জে হবে। আমাদের শিডিউল করা রয়েছে।’
পুরসভার চেয়ারম্যান কেশব দাস বলেন, ‘একটা বড় অংশের ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রেড লাইসেন্স নেই। তবে ইতিমধ্যেই আমাদের তরফেও মাইকিং করে ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই কাজ চলছে। শেষ হলে পরিসংখ্যান বলা যাবে। রাস্তার পাশে খোলাখুলি বিনা লাইসেন্সে খাওয়ার বিক্রি করছে। সেটা দেখার জন্য ফুড সেফটি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে।’