সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: একদিকে চড়া বাজার অপরদিকে গতবারের তুলনায় ফলন কিছুটা কম। আবার গোদের উপর বিষফোড়া হিসেবে মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি এবং ভেজা বাতাস। ফলে আলু গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ালে তাতে যেমন ক্ষতির আশঙ্কা, পাশাপাশি জমিতে তুলে ডাঁই করে রাখা কিংবা বস্তাবোঝাই আলু বৃষ্টির জলে ভেজার পরও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ধূপগুড়ি ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা তিলক বর্মনের কথায়, ‘এমনিতে এই মুহূর্তে আলুর যা বয়স তাতে বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ালে বা তুলে রাখা আলু দীর্ঘ সময় ভিজলে তাকে না শুকিয়ে হিমঘরে রাখা উচিত হবে না। সেক্ষেত্রে হিমঘরে আলুর বড় ক্ষতি হবে।’
গত বছর এই সময় যে আলু বিক্রি হয়েছিল ৬ টাকা কেজি দরে এবারে তা বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা কেজি বা এক লরি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায়। এই চড়া বাজার চাষিদের মুখে হাসি ফোটালেও গতবারের তুলনায় ফলনে ঘাটতি তাঁদের ভাবাচ্ছেও।
জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর, চলতি মরশুমে জেলায় সর্বমোট আলু চাষ হয়েছে ৩৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে আগরি বা প্রাক মরশুমি চাষের পরিমাণ ৮,২৬২ হেক্টর। বাকি ২৪,৭৮৮ হেক্টর জমিতে হিমঘরে রাখার মতো মরশুমি সাদা জ্যোতি, লাল হল্যান্ড প্রভৃতি আলুর চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় হেক্টর প্রতি মরশুমি আলু ফলেছিল গড়ে ৩১ মেট্রিক টন। এবারে এখনও পর্যন্ত জেলায় ৭০ শতাংশ আলু উঠেছে। এর ফলন হেক্টর প্রতি ২৫,৫০০ মেট্রিক টনের বেশি নয়।
জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক তথা সহ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) গোপালচন্দ্র সাহা বলেন, ‘ফলনে ঘাটতির একটি কারণ প্রায় বৃষ্টিহীন দীর্ঘায়িত শীত। এর ফলে আলুর আকার এবং ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে।’ ফলন কম হওয়ার জন্যেই যে বাজার চড়া তা মেনে নিয়েছেন আড়তদার থেকে বড় কারবারিরা। তবে এই দাম তাঁদের মনেও ভয় ধরাচ্ছে। হিসেব অনুসারে, বর্তমানের ১২ টাকা কেজি দরে মাঠ থেকে কেনা আলু হিমঘরে পৌঁছাতে কেজি প্রতি আরও অন্তত দেড় টাকা খরচ হবে। তারপর হিমঘরের ভাড়া এবং ওজনে ঘাটতি ধরে তার সঙ্গে আরও অন্তত সাড়ে চার টাকা জুড়তে হবে। ফলে ১২ টাকায় আলু কিনে হিমঘরে রাখলে তার মোট দাম দাঁড়াবে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। তারপর আসবে মুনাফার প্রশ্ন। এমন চড়া বাজারে শুরু হওয়া বৃষ্টি কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে দোলাচলে সবাই।
উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জগদীশ সরকার বলেন, ‘বৃষ্টি শুরু হলে আমদানিতে ঘাটতি হবে, ফলে দাম আরও উঠতে পারে। আবার বৃষ্টিতে ভিজে আলুর ক্ষতি হলে বাজারদর কমতেও পারে। এই ক’দিনের আবহাওয়ার উপর সবটা নির্ভর করবে।’