শিলিগুড়ি: ঠিক যেন ভাড়ায় নেওয়া ছোট গাড়ি। এমন গাড়ি ভাড়া নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানো যায়। এবারে একই রাস্তায় সওয়ার টয়ট্রেনও। বিদেশি পর্যটকরা তিনদিনের জন্য এই ট্রেনের একটি স্টিম ইঞ্জিন ও একটি বগি ভাড়া করেছেন। এই ট্রেন নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় রাত কাটিয়ে শৈলশহরের দিকে ছুটবেন। ভাড়া? গোটা প্যাকেজে সবমিলিয়ে মাত্র ৪১ হাজার টাকা। ভাড়ার অঙ্কটা শুনে নিশ্চই অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (ডিএইচআর) সূত্রে খবর, এই রেলের ইতিহাসে টয়ট্রেনকে নিয়ে হল্ট–জার্নি এই প্রথম। টয়ট্রেনকে আরও বেশি করে সবার সামনে তুলে ধরতে প্রচারের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। ডিএইচআরের ডিরেক্টর একে মিশ্রর বক্তব্য, ‘যে বিদেশিরা এবারে এই ট্রেন ভাড়া করেছেন তাঁরা অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম ভালোবাসেন। তাই এভাবে হল্ট করে তাঁরা দার্জিলিং যাবেন। সেইমতো ট্রেন ভাড়া দেওয়া হয়েছে।’
সোফিয়া, হেনরি, আলেকজান্ডার, এলিনা একেকজন একেক দেশের বাসিন্দা। কেউ সুইডেন, কেউ আমেরিকা, কেউ সিঙ্গাপুর, জার্মানি বা ব্রিটেনের। একটি আন্তর্জাতিক গ্রুপের মাধ্যমে সকলের পরিচয়। ওই গ্রুপে আরও বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। মূলত করোনা অতিমারির সময় এই গ্রুপ তৈরি হয়। গ্রুপের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন দেশের বাসিন্দা। কিন্তু বছরে একবার তাঁরা কোনও না কোনও দেশে সমবেত হন। সেই সূত্র ধরেই এবার দার্জিলিংয়ে আসার সিদ্ধান্ত। সেইমতো আগেই ভারতীয় রেলের সঙ্গে যোগাযোগ। সব নিশ্চিত হওয়ার পর দলটি ১০ দিনের পাহাড় সফরে এসেছে। ২০ জনের এই দল একটি স্টিম ইঞ্জিন ও বগি ভাড়া নিয়েছে। তিনদিন হল্ট করে করে দলটি দার্জিলিং পৌঁছাবে। শনিবার দলটি এনজেপি থেকে তিনধারিয়া পর্যন্ত যায়। দলের সদস্যরা শনিবার রাতে তিনধারিয়াতেই থাকবেন। রবিবার তিনধারিয়া থেকে কার্সিয়াং পর্যন্ত যাবেন। ট্রেনটি সোমবার কার্সিয়াং থেকে দার্জিলিং পৌঁছাবে।
এদিন সুকনা ছাড়িয়ে ট্রেন রংটংয়ের দিকে ছুটতেই প্রকৃতির সৌন্দর্যে সকলে অবাক। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সমানে একের পর এক ছবি তোলা। সোফিয়া এসেছেন সুইডেন থেকে। কেমন লাগছে পাহাড় আর টয়ট্রেন? প্রশ্ন শুনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, ‘আমি আপ্লুত।’ আলেকজান্ডার এবং এলিনা দুজনেই ব্রিটেনের বাসিন্দা। করোনার সময়েই পরিচয়। দুজনে আবার বাগদানও সেরে ফেলেছেন। কেমন অনুভূতি জানতে চাইলে দুজনের বক্তব্য, অনেক দিনের ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্ত আমরা উপভোগ করতে চাই।
পর্যটন মহল গোটা বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যথেষ্টই আপ্লুত। পর্যটন ব্যবসায়ী তথা ডিএইচআর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল রাজ বসুর বক্তব্য, ‘রেলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। শুধু বিদেশি নয়, ভারতীয়দেরও চার্টার্ডের ক্ষেত্রে রেল সুবিধা দিয়েছে। অনেকেই আছেন যাঁরা বিয়ের জন্যে, জন্মদিনের জন্যে টয়ট্রেন ভাড়া নেন।’ এতোয়ার সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘রেলের এই উদ্যোগ খুবই ভালো। ডিএইচআর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলে আমরা দেশ–বিদেশে এই উদ্যোগকে প্রচার করতে পারি। এতে সবারই লাভ হবে।’