কোচবিহার: নির্বাচনের আগে গাঁজা পাচারের কোটি কোটি টাকা ঢুকছে নেতাদের পকেটে। সন্ত্রাস ছড়াতে আগ্নেয়াস্ত্র কেনা, বোমা তৈরি, ঢালাও মদ-মাংসের খরচ জোগাবে সেই টাকা। শাসক-বিরোধী, দু’দলই একে অপরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায়ের অভিযোগ, ‘শুধু গাঁজা নয়, কয়লা, গোরু সহ নানা সামগ্রী পাচারের নিয়ন্ত্রণ বিজেপির হাতে। আমাদের কাছে খবর রয়েছে, সেই অর্থ তারা নির্বাচনের কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’ পালটা বিজেপির জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলছেন, ‘তৃণমূলের নেতাদের মদতেই গাঁজা চাষ হয়। নির্বাচনের কাজে তো বটেই, সারা বছর শাসকদলের নেতারা কালো টাকার ওপর নির্ভর করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। এছাড়া তাঁদের মাধ্যমে টাকার একটি অংশ যায় পুলিশের কাছেও।’
এখন গাঁজা চাষের মরশুম আর কোচবিহারে সেই কারবারের বাড়বাড়ন্তের কথা কারও অজানা নয়। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য বলছেন, ‘কয়েকমাস ধরে লাগাতার গাঁজা চাষের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। বহু জমির গাঁজা গাছ নষ্ট করা হয়েছে।’
জেলায় প্রতিবছর বিঘার পর বিঘা জমিতে এই বেআইনি চাষ হয়। জানা গেল, চলতি বছরে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির গাঁজা গাছ নষ্ট করেছে পুলিশ। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে কোচবিহার-১ ব্লকে। এরপরই রয়েছে পুণ্ডিবাড়ি থানা এলাকা। এছাড়াও দিনহাটা, সিতাই, শীতলকুচি, ঘোকসাডাঙ্গা সহ বেশকিছু জায়গায় রমরমিয়ে কর্মকাণ্ড চলে।
সাধারণত নদীর চরে মালিকানাহীন জমিতে এই চাষ করেন স্থানীয়রা। তবে পেছন থেকে তাঁদের মদত দেন প্রভাবশালীরা। চাষের পর কৌশলে গাঁজা বাইরে পাচার করে দেওয়া হয়। এ ধরনের ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় চ্যাংরাবান্ধায় একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। তিনি ট্রলিব্যাগে ১৬ কেজি ৯০০ গ্রাম গাঁজা নিয়ে ময়নাগুড়ি যাচ্ছিলেন।
নানা পথে নিয়মিত গাঁজা পাচার চলছে বলে অভিযোগ। যাঁরা চাষ করছেন, তাঁরা ছিটেফোঁটা টাকা পেলেও বড় অঙ্ক ঢুকছে পাচারের ‘মাস্টারমাইন্ড’-দের পকেটে। ভোটের সময় কোচবিহারে আগ্নেয়াস্ত্রের দাপাদাপি, মুড়িমুড়কির মতো বোমাবাজির ঘটনা প্রশ্ন তুলে দেয় খরচের উৎস নিয়ে। এছাড়াও কর্মীদের মন খুশি রাখতে বহু টাকার প্রয়োজন। অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে সেই অর্থের জোগান দিয়ে যাচ্ছে গাঁজা।
ভোট যত ঘনিয়ে আসছে, কোচবিহার, দিনহাটা সহ গোটা জেলার মানুষের মধ্যে ততই আশঙ্কা বাড়ছে। কালো টাকার জোগান যত বাড়বে, ক্ষমতা দখলের বেআইনি লড়াইও তত মাথাচাড়া দেবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য জেলাজুড়ে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী আরও বেশি সক্রিয় হোক, চাইছেন তাঁরা।