শিলিগুড়িঃ শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে (Ghost fear) ভূতের আতঙ্ক! আর সেই ভূতের ভয়কে কেন্দ্র করে ‘ডাইনি’ অপবাদ এলাকারই বাসিন্দা জেলাস্তরের মহিলা বাম নেত্রীকে? এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে দুই সপ্তাহ ধরে। ওল্ড মাটিগাড়া রোডের (Matigara) ধারেই গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা কমিটির সহ সিটু-র জেলা কমিটির নেত্রী শুভ্রা পালের বাড়ি। সে তাঁর বৌদির সঙ্গে ওই বাড়িতে একাই থাকেন।
শুভ্রার বৌদি ছায়া পালের কথায়, ‘বছর বারো আগে আমার বড়ো ননদের মেয়ে আমাদের বাড়ির পেছন দিকের ঘরে আত্মহত্যা করেছিল। এতবছর পর প্রতিবেশি রাজু পাসোয়ানের পরিবার দাবি করছে, তাঁদের বাড়ির মেয়েকে ভূতে ধরেছে।’ এমনকি শুভ্রাদেবিকে একা ওই বাড়িতে বারবার ঢোকার জন্য চাপ দিচ্ছে রাজু। একা ঢুকতে না চাওয়ায় এলাকায় তাঁর ননদের নামে ডাইনি অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ছায়ার।
যদিও এরপেছনে জমি দখলের চক্র রয়েছে বলে মনে করছেন শুভ্রা। তাঁর বক্তব্য, ‘এলাকায় রাস্তায় ধার বরাবর দোকান বসানোর চক্র চলছে। আমার বাড়ির সামনেও দোকান বসানোর চক্র হয়েছে। এমনকি বাড়ির সামনে থাকা গাছেও ভূত থাকে বলে, সেই গাছ কাটার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদ করার জন্যই ডাইনি অপবাদ দেওয়া শুরু হয়েছে।’
এদিকে, এব্যাপারে রাজু পাসোয়ানকে প্রশ্ন করতে গেলে প্রথমে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তিনি পালিয়ে যান। এমনকি এদিনই পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা এলাকায় এলেও রাজু আর সামনে আসেনি। সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য শুভ্রজিৎ চৌধুরির কথায়, ‘শুভ্রাদেবী অবিবাহিতা। ওনার দাদাও মারা গিয়েছেন। বৌদির দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে বাইরে থাকে, এক মেয়ে কলকাতায় থাকে। এই সুবিধা নিতেই এলাকায় জমি মাফিয়াদের নজর পড়েছে শুভ্রাদেবীদের জমির ওপর।’ ব্যাপারটা উড়িয়ে দিচ্ছেন না ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার অমর আনন্দ দাস। তাঁর পরিষ্কার বক্তব্য, ‘পুরো ব্যাপারটাই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে ভূতের গল্প এল কোথা থেকে? শুভ্রা পাল আমাকে বিষয়টা জানিয়েছেন। আমি সোমবার রাজুকে ডেকেছি। এর পেছনের রহস্য উদঘাটন করবই।’
পুরনিগমের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে গত কয়েকমাস ধরেই জমি দখলের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এবারে জমি দখল করতে ‘ভূত’-এর সহায়তাও কী নেওয়া হচ্ছে? তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, শুভ্রা পালের বাড়ি ছাড়া আশপাশে রাস্তার ধারে একাধিক দোকানপাট গজিয়ে উঠেছে। রাজুও নিজের বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে পাকা দোকান বানিয়ে ফেলেছে। এই অবস্থায় এবারে শুভ্রার বাড়িটাই দখলদারদের নজরে পড়েছে বলে গুঞ্জন এলাকায়। এদিন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের দার্জিলিং জেলা কমিটির কার্যকরি সভাপতি ড. গোপাল দে। তিনি বলেন, ‘পরিবারটা দূর্বল। মাথার ওপর কোনও পুরুষ নেই। তাই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে জমি হাতানোর চক্রান্ত চলছে বলে ধারণা। আমরা ওনাদের পাশে রয়েছি।’