শামুকতলা ও নাগরাকাটা: প্রার্থনা, ভক্তিগীতি, প্রভু যীশুর বাণী এবং ধর্মীয় আলোচনার মধ্যে দিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলাজুড়ে গুড ফ্রাইডে পালন করা হল। শুক্রবার ফালাকাটা, বীরপাড়া, আলিপুরদুয়ার, শামুকতলা, মহাকালগুড়ি, কুমারগ্রাম, কামাখ্যাগুড়ি, বারবিশা, খোয়ারডাঙ্গা, কালচিনি সহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিটি গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। চা বাগানের বিভিন্ন চার্চেও এই উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই দিনটি মূলত খ্রিষ্টানদের দ্বারা পালিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই উৎসবকে পবিত্র শুক্রবার, কালো শুক্রবার, মহান শুক্রবারও বলা হয়।
সাঁওতালপুর মিশনের একটি চার্চের পাস্টার রেভারেন্ড বর্ণাবাস কিস্কু বলেন, ‘গলগথায় যিশু খ্রিষ্টের ক্রুসবিদ্ধকরণ, মৃত্যু ও সমাধিমন্দির থেকে তার পুনরুজ্জীবনের স্মরণে এই উৎসবটি পালিত হয়। জগতের সমস্ত মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রভু যীশু যে প্রচণ্ড যন্ত্রণাময় মৃত্যু তিনি হাসিমুখে সহ্য করেছিলেন, সেই আত্মবলিদানকেই সম্মান জানানো হয় এই দিনে।’
এদিন মহাকালগুড়ি মিশন এলাকার পিআইসি, ইউসিএনআই, সেন্থ জোসেফ, সিএনআই সহ প্রতিটি চার্চে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। সাঁওতালপুর সিএনাইচার্চে এদিনের অনুষ্ঠানে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। পরিচালন কমিটির অন্যতম কর্মকর্তারা জানান, গুড ফ্রাইডে বা পুণ্য শুক্রবার- খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। মানবজাতিকে পাপ থেকে উদ্ধার করতে এদিনই ক্রুশকাঠে আত্মবলিদান দিয়েছিলেন প্রভু যিশু।
জানা যায়, ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় যীশু সাতবার কথা বলেছিলেন। খ্রিস্টানদের জীবনে সেই সাতটি বাণীর গুরুত্ব অসীম। গুড ফ্রাইডেতে প্রতিবছর যিশুর এই সাতবাণী ধ্যান করেন তাঁরা। মহাকালগুড়ি সিএনআই চার্চের পাস্টার রেভারেন্ড প্রদীপ নার্জিনারী জানান, পিতা এদের ক্ষমা করো, কারণ এরা কী করছে জানে না- ক্রুশ থেকে এটাই ছিল যিশুর প্রথম বাণী। এছাড়া আজই তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে যাবে, হে নারী, ওই দেখ তোমার পুত্র, ঈশ্বর তুমি কেন আমাকে পরিত্যাগ করেছ, আমার পিপাসা পেয়েছে, সমাপ্ত হল এবং তোমার হাতে আমার আত্মা সমর্পণ করি-ক্রুশের উপর থেকে যিশু এই সাতটি বাণী বলেছিলেন।
শুক্রবার পবিত্র গুড ফ্রাইডে পালন করেন ডুয়ার্সের নানা স্থানের খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীরাও। এই উপলক্ষে এদিন চা বাগান সহ নানা স্থানের চার্চে দিনভর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সবচেয়ে বড় কর্মসূচীটি হয় চম্পাগুড়ির শতাব্দী প্রাচীন সেক্রেট হার্ট চার্চে। সেখানে প্রভু যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার ঘটনাটি দৃশ্যাভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। ওই চার্চে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ছিল বিশেষ প্রার্থনার আসর। বাইবেল থেকে যীশুর বাণী শোনান চার্চের ফাদার সমীর তিরকি। দিনভর উপোস করে গুড ফ্রাইডের অনুষ্ঠানে শামিল হন কয়েক হাজার প্রচুর মানুষ। চার্চের সম্পাদক সঞ্জয় কুজুর জানান, আগামী শনি ও রবিবার এই দুটি দিনকে যথাক্রমে ইস্টার স্যাটারডে ও ইস্টার সানডে হিসেবে পালন করা হবে। খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সামাজিক সংগঠন নর্থ বেঙ্গল অল ডুয়ার্স ক্রীশ্চান মাইনরিটি অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ গুরুং জানান, গুড ফ্রাইডে হলো শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তাবাহী একটি ধর্মচারণ। প্রভু যীশুর একতার বার্তা সর্বত্র পৌঁছে দিতে তাঁরা বদ্ধপরিকর।