মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার : এনবিএসটিসির বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিষেবা চালু হচ্ছে পুজোর আগেই। মাসখানেক আগে পরিকাঠামোগত সমস্যার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আলিপুরদুয়ার থেকে কলকাতাগামী বাস পরিষেবা। মহালয়ার আগে ফের আলিপুরদুয়ার-কলকাতা রুটে সেই সরকারি বাস পরিষেবা চালু করা হচ্ছে। সেজন্য অন্যান্য ডিপো থেকে ৩টি বাসও নিয়ে আসা হচ্ছে নিগমের আলিপুরদুয়ার শহরের ডিপোয়।
গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কিন্তু ওই বাস পরিষেবা চালু ছিল। যদিও এই রুটে তখন একটি মাত্র সরকারি বাসই চলত। ওই বাস পরিষেবা প্রায় দু’মাস আগে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিত্যযাত্রী থেকে ব্যবসায়ী, এমনকি পর্যটকরাও সমস্যায় পড়েছেন। ট্রেনের টিকিট না পেলে আচমকা কলকাতা যাওয়ার প্রয়োজন হলে আলিপুরদুয়ার জেলার বাসিন্দাদের ভরসা ছিল এনবিএসটিসির ওই সরকারি বাসই। পুজোর আগে তো এই রুটে চাহিদা বাড়েই। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পর্যটক ও জেলার সাধারণ বাসিন্দারাও এই বাস রুট আবার চালু করার দাবি তুলেছিলেন। সেই দাবিতেই সরব হয় বিভিন্ন সংগঠন।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘মহালয়ার আগেই আমরা কলকাতা রুটে বাস পরিষেবা চালু করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছি। যাত্রী পরিষেবার স্বার্থে ওই রুটটি শীঘ্রই চালু করা হবে।’
কিন্তু সেই পরিষেবা এর আগে বন্ধ হয়েছিল কেন? সমস্যা দেখা দেয় ১৫ বছরের বেশি বয়সের পুরোনো সরকারি বাস পরিষেবা বাতিল করার পর থেকেই। গত ৩ অগাস্ট থেকে বিভিন্ন রুটে আলিপুরদুয়ার ডিপোর ১৯টি পুরোনো বাস চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটেও বাস পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। কলকাতা রুটে বাস পরিষেবা বন্ধ করাই শুধু নয়, অসমের বঙ্গাইগাঁও রুটেও বাস পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেসবের বদলে ওইসব রুটের বাসকে আলিপুরদুয়ার-শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার-কোচবিহারের মতো রুটে চালানো হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওইসব রুটে প্রতিদিন যাত্রী হয়। আর প্রতিদিনই যাত্রীর চাপ থাকে।
কিন্তু আলিপুরদুয়ার শহর থেকে কলকাতা পর্যন্ত সরকারি তো বটেই, কোনও বেসরকারি বাস পরিষেবাও নেই। তাই এনবিএসটিসি সেই পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার পর স্বভাবতই শহরের বাসিন্দা ব্যাপক সমস্যায় পড়েন। আলিপুরদুয়ার টাউন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রানা চক্রবর্তী বলেন, ‘পুজোর মরশুমে এখন অনেক ব্যবসায়ীকে দোকানে মাল তোলার জন্য কলকাতা, নবদ্বীপ, ফুলিয়া যেতে হয়। আলিপুরদুয়ার-কলকাতা রুটে একমাত্র সরকারি বাস পরিষেবা বন্ধ হওয়ায় ব্যবসায়ী ও জেলার বাসিন্দাদের ভোগান্তি হচ্ছে।’ মহালয়ার আগে ওই বাস পরিষেবা চালু হলে ব্যবসায়ী মহল যে বিশেষভাবে উপকৃত হবে, সেকথা জানিয়েছেন রানা।
এছাড়া আলিপুরদুয়ার পর্যটনের জেলা, বহু পর্যটক বাসে চেপেও এখানে বেড়াতে আসেন। তাই সরকারি বাস পরিষেবা চালুর পাশাপাশি এসি আধুনিক বাস এখান থেকে চালানো হলে তাতে নিগমের লাভ হবে, সুবিধা হবে ব্যবসায়ী থেকে পর্যটকদেরও।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের যে ডিপোতে প্রয়োজনের থেকে বেশি সংখ্যক গাড়ি রয়েছে, সেই সকল ডিপো থেকে বাস আলিপুরদুয়ার ডিপোতে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে পরিবহণ দপ্তর। রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরও চাইছে আলিপুরদুয়ার-কলকাতা রুটের বাস পরিষেবা দ্রুত চালু হোক। তবে বাসের ঘাটতি মেটাতে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি পরিবহণ নিগম যাত্রী পরিষেবাকেও গুরুত্ব দিতে পদক্ষেপ শুরু করেছে। আপাতত নতুন বাস আলিপুরদুয়ার ডিপোয় না এলেও পুরোনো যেসব বাসের ‘স্বাস্থ্য’ ভালো, সেগুলি দিয়েই ওই বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিষেবা আবার চালু করা হবে।
তবে এনবিএসটিসির বাসের সমস্যা কিন্তু মিটছে না। আলিপুরদুয়ার-শিলিগুড়ি রুটে আগে ১০টি বাস চলত। এখন ৮টি বাস চলছে। কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার রুটে আগে ১০টি বাস চললেও, এখন চলছে ৬টি বাস। জোড়াই-শিলিগুড়ি রুটে আগে ৫টি বাস চলাচল করত। এখন চলছে ৪টি বাস। বাসের ঘাটতি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই রুটগুলিতেও অতিরিক্ত যাত্রীদের বাড়তি চাপ এখনই কমছে না বলে মনে করছেন সংস্থার কর্মীরা।