বক্সিরহাটঃ বালি-পাথর বিক্রির চালান প্রক্রিয়া এখন চলে অনলাইনে। তারপরও এক খাদানের বালি-পাথর বিক্রির চালান পৌঁছে যাচ্ছে অন্য খাদানে। দূরত্ব বাড়লে চালানে সময়ের মেয়াদও বাড়ে। এই সুযোগে অন্য জায়গার বালি-পাথর বিক্রির চালানে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের রায়ডাক নদী লাগোয়া অবৈধ খাদানগুলি থেকে দিনে দু’বার করে চলছে এসব পাচার। প্রায় বছরখানেক ধরে এমন লুট চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ফলে, সরকারি রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে জেনেও নীরব প্রশাসন।
তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের রায়ডাক থেকে বালি-পাথর তুলে তা বিক্রির জন্য তিনটি খাদানকে পাঁচ বছরের জন্য লিজ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু দু’বছর আগেই সেগুলির মেয়াদ ফুরিয়েছে। এক বছর আগে মহিষকুচি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের টাকোয়ামারি লাগোয়া রায়ডাক নদী থেকে বালি-পাথর তুলে বিক্রির জন্য খাদান লিজ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সরকারি নির্দেশে, খাদান মালিক বছরে ১৩ লক্ষ ঘনফুট বালি-পাথর তুলে বিক্রি করতে পারবেন। ইতিমধ্যেই ওই পরিমাণ বালি-পাথর বিক্রি শেষ। তারপরও সেখান থেকে বালি-পাথর তোলা চলছে। গোটা বিষয়টিকে বৈধ তকমা দিতে লরিচালকদের হাতে তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের তোর্ষা নদীর চালান ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল খাদান মালিকের বিরুদ্ধে। এনিয়ে সরকার অনুমোদিত খাদান মালিকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন লরিচালকরা। তারপরই ওই চালান কারচুপির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
বর্তমানে আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম ব্লকের রায়ডাক নদী লাগোয়া হেমাগুড়ি ও তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের তোর্ষা নদীর খাদানের বালি-পাথর বিক্রির চালান দিয়ে তুফানগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের রায়ডাক লাগোয়া অবৈধ খাদানগুলি থেকে চলছে বালি-পাথর পাচার। সূত্রের খবর, এসব বিক্রির বিষয়টি চলে অনলাইনে। খাদান সহ গন্তব্যের ঠিকানা, গাড়ির নম্বর, ঘনফুটের পরিমাণ সবকিছুই চালানে উল্লেখ থাকে। গন্তব্যস্থলের দূরত্ব অনুযায়ী চালানে সময়ের ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে অবৈধ খাদান থেকে বালি-পাথর বোঝাই লরি একবার বৈধ চালান নিয়ে রাস্তায় নামলে তা যে অবৈধ খাদানের তা প্রমাণ করাও প্রশাসনের পক্ষে কঠিন। তবে কখনও চালানে উল্লেখ থাকা নির্দিষ্ট গন্তব্যের বদলে তুফানগঞ্জ মহকুমাতেই সেই বালি-পাথর নামাতে গিয়ে প্রশাসনের নজরে পড়লে তখন চালকদের যুক্তি, গাড়ির যন্ত্রাংশ খারাপ হয়েছে। তাই, গাড়ি গ্যারাজে নেওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে দিনহাটার বদলে তুফানগঞ্জে মাল নামাতে হচ্ছে। এভাবেই বছরখানেক ধরে একই চালান বহুবার ব্যবহার করে চলছে এমন কারবার।
এপ্রসঙ্গে বিজেপির তুফানগঞ্জ বিধানসভার আহ্বায়ক বিমল পাল জানান, সরকারি অনুমোদিত খাদান মালিকের সঙ্গে শাসকদলের যোগসাজশে একই চালানে দু’বার করে পাচার চলছে। প্রশাসন সবকিছু জেনেও নীরব। অভিযোগ সম্পর্কে তুফানগঞ্জ-২ ব্লক তৃণমূলের সহ সভাপতি নিরঞ্জন সরকার বলেন, ‘বালি-পাথর কারবারিদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। বিরোধীরা সবকিছুতেই শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। প্রশাসন অভিযোগ খতিয়ে দেখে আইনমাফিক ব্যবস্থা নিক।’ মহকুমা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক সুশান্ত সেনগুপ্ত জানান, একই চালানে একাধিকবার বালি-পাথর পরিবহণ বেআইনি। যারা নথিতে কারচুপি করে তাদের জরিমানা করা হয় বলে তাঁর দাবি।