শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করার চিঠি এসে পৌঁছেছে জেলার কয়েকজনের কাছে। তা নিয়ে কোচবিহার জেলার রাজনীতিতে এখন চাপানউতোর চলছে। আর তারই মধ্যে কোচবিহারে ধরা পড়া ইরানের নাগরিকদের কাছ থেকে মিলল জাল আধার কার্ড। ধৃতদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা সেসব আধার কার্ড নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়েই তো পুলিশের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম। সেখানে ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে দিনহাটার সাহেবগঞ্জ এলাকার। ইরানের সঙ্গে এই দিনহাটা যোগ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পুলিশ মহলে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, একটি দালালচক্রের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ইরানের ওই বাসিন্দাদের। তাদের মাধ্যমেই ইরানিরা নেপাল থেকে চোরাপথে কোচবিহারে প্রবেশ করে। সাহেবগঞ্জেই তাদের ডেরা বাঁধার উদ্দেশ্য ছিল। তবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় কেন তারা থাকার পরিকল্পনা করেছিল সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রশ্ন অনেকগুলো, কারা তাদের আধার কার্ড বানিয়ে দিল? অনুপ্রবেশ করানোর দায়িত্বে থাকা দালালচক্রে কারা কারা জড়িত রয়েছে? এমন অনেক কিছুর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যের কথায়, ‘সব বিষয় নিয়েই তদন্ত (investigation) করা হচ্ছে।’
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, দিনহাটার সাহেবগঞ্জে অতীতেও আন্তর্জাতিক (International) অনুপ্রবেশ চক্র সক্রিয় ছিল। চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই এখানে প্রবেশ করে। একইভাবে ইরানিদের সাহেবগঞ্জে আনার পরিকল্পনা ছিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আগে থেকে ইরানের কোনও বাসিন্দা এখানে এসে ঘাঁটি গেড়ে নেই তো? ধৃত চারজন ইরানি যেহেতু বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘাঁটি গাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল, সেক্ষেত্রে তাদের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার পরিকল্পনাও থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ইরান থেকে মালয়েশিয়া, নেপাল হয়ে অভিযুক্তরা কোচবিহারে ঢোকে। বৃহস্পতিবার রাতে কোচবিহার শহরের একটি হোটেলে প্রবেশের পর পুলিশ জাভেদ আমিনিমহর, মেহেদি পাহাঙ্গে, এব্রাহিম দেরাখশানপুর ও এলহাম দেরাখশানপুরকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছে ভারতে প্রবেশের বৈধ কোনও কাগজপত্র ছিল না। পাশাপাশি ধৃত জাভেদ ও মেহেদির কাছ থেকেই জাল আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে ধৃতরা পুলিশি হেপাজতে রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই দালাল চক্রের কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা আধিকারিকরা।
কোচবিহার জেলা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত (India-Bangladesh Border) এলাকায় থাকায় স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই জেলার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এখানে চোরাপথে বিদেশিদের ঢুকে পড়া, এমনকি এখানে এসে জাল ভারতীয় আধার কার্ড তৈরি করে ফেলার ঘটনায় গোয়েন্দারাও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক স্তরের বড় কোনও সংগঠন এর পেছনে রয়েছে কি না, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।