বর্ধমান: বিরোধীরা নয়। নাগরিক পরিষেবা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন খোদ দলীয় কাউন্সিলাররাই। ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের কালনায়। কাউন্সিলারদের অভিযোগ, কালনা পুরসভার পুরপ্রধান পুরসভা চালাতে ব্যর্থ। সে কারণে শিকেয় উঠেছে নাগরিক পরিষেবা। এমন পুরপ্রধানের অপসারণ চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল কাউন্সিলাররা জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠিও পাঠিয়েছেন। এনিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের আসল রূপ প্রকাশ্যে এনে দিয়েছেন তৃণমূলেরই কাউন্সিলাররা।
কালনা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা কাউন্সিলার রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, পুরসভার পুরপ্রধানের পদ থেকে আনন্দ দত্তকে সরাতে কাউন্সিলারদের সই করা একটি চিঠি পুরসভায় জমা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চিঠির প্রতিলিপি পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক, কালনার মহকুমা শাসক ও উপ-পুরপ্রধানকেও পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে সই করা কাউন্সিলার সুনীল চৌধুরীর দাবি, পুরপ্রধান হিসেবে আনন্দ দত্ত পুরোপুরি ব্যর্থ। ওনার ব্যর্থতার কারণে কালনা শহরে নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। তার মাসুল গুণতে হচ্ছে শহরের নাগরিকদের।
একই দাবি করেছেন দলেরই শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলার রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর আরও অভিযোগ, পুরসভায় কাজের গতি হারিয়ে গিয়েছে। কোনও কাউন্সিলার কাজ করতে পারছেন না। মানুষ সমালোচনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি পুরসভায় আছি ঠিক কথা। কিন্তু আমিতো দলের টাউন প্রেসিডেন্ট। আমার কাছে কালনার মানুষ অভিযোগ জানাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা চলছে। এই কারণে আমরা ১৪ জন কাউন্সিলার আনন্দ দত্ত’র বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে চিঠি পাঠিয়েছি।
বিদ্রোহী কাউন্সিলারদের অভিযোগ, পুরপ্রধান কাউন্সিলারদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন না। উলটে দুর্ব্যবহার করেন। কর্মীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। পুরপ্রধানের নির্দেশেই নাগরিকদের কাছে দ্বিগুণ মিউটেশন ফি নেওয়া হচ্ছে। একবার ফিস নেওয়া হচ্ছে, আবার নেওয়া হচ্ছে ডোনেশন।
যদিও এই অভিযোগ নস্যাৎ করে পুরপ্রধান আনন্দ দত্ত বলেন, ‘আমার কাছে এখনও কোনও চিঠি এসে পৌঁছায়নি। এরকম চিঠি পেলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব।’ এদিকে পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার অনিল বোসের বিস্ফোরক অভিযোগ, অনাস্থাপত্রে তিনি স্বাক্ষর করেননি। কেউ তাঁর নামের স্বাক্ষর জাল করেছে। এদিকে ১৪ কাউন্সিলারের আনা অনাস্থা চিঠি বৃহস্পতিবারও পুরসভায় রিসিভ করাতে পারেননি কাউন্সিলাররা। সাংবাদিক সম্মেলন করে বর্ষীয়ান কাউন্সিলার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘বুধবার আমরা ওই চিঠি ইমেইল করে মহকুমা শাসক, জেলাশাসক এবং কালনা পুরসভাকে পাঠিয়েছি। এদিন পুরসভায় হার্ড কপি জমা দিতে গেলে, আনন্দ দত্তের নিষেধের কারণে তা নেওয়া হয়নি।’ বিদ্রোহী কাউন্সিলার সুনীলবাবু এদিন হুঁশিয়ারি দেন, তাঁদের দাবি না মানা হলে তাঁরা সব কাউন্সিলাররা পদত্যাগ করবেন।