জলপাইগুড়ি: মহিলা পুলিশ অফিসারকে থানার ভেতর শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ উঠল এক মহিলা আইনজীবির বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি কোতয়ালি থানায়। অভিযুক্ত মহিলা আইনজীবীর নাম আরাত্রিকা চন্দ। অভিযুক্তকে রাতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহরে। অন্যদিকে, আরাত্রিকা জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের একজন সদস্য। এই খবর জানাজানি হতেই শুক্রবার আরিত্রিকাকে সাময়িক সাসপেন্ড করেছে বার অ্যাসোসিয়েশন। এদিন আরাত্রিকার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ তাকে আদালতে পেশ করেছে। কোতয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার বলেন, ‘ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করে তাঁর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।‘
সূত্রে খবর, আরাত্রিকার এক আত্মীয় সম্প্রতি প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ওই প্রতারণার মামলার অভিযুক্তের স্ত্রী আরাত্রিকার পরিবারের একজন সদস্য। এই মামলাটির আইনি দিকগুলো দেখছিলেন আরাত্রিকা নিজে। আরাত্রিকার মা তপতী চন্দ বলেন, ‘আমার মেয়ে যেহেতু ওই মামলাটির আইনি দিকটি দেখছিল সেক্ষেত্রে প্রায়ই ওর কাছে বিভিন্ন ধরের হুমকির ফোন কল আসে। বৃহস্পতিবার রাতেও এমনই একটি ফোন কল আসার পরেই সে থানায় গিয়েছিল একটি অভিযোগ জানাতে।‘
পুলিশ সূত্রে খবর, আরাত্রিকা থানায় আসার পরে প্রথমে জিডি রুমে থাকা পুলিশকর্মীর সঙ্গে দেখা করেন। নিজের অভিযোগ জমা দেওয়ার পাশাপাশি যে প্রতারণার মামলাটি তিনি দেখছেন তাঁর কিছু নথি পুলিশের কাছে দেখতে চান। তখন জিডির দায়িত্বে থাকা পুলিশ আফিসার বিষয়টি নিয়ে সিনিয়ার অফিসার উপাসনা গুরুংয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। আরাত্রিকা থানার ভেতরে গিয়ে অযথাই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন বলে অভিযোগ। মহিলা পুলিশ অফিসার আরাত্রিকাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি উলটে মহিলা পুলিশ অফিসারের সঙ্গে বচসায় শুরু করেন। বচসা চলাকালীন আরাত্রিকা মহিলা পুলিশ অফিসারকে শারীরিক নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ। সেটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়ে। কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশকে থানার ভেতর শারীরিক নিগ্রহ করার অভিযোগ সেই মুহুর্তেই আরাত্রিকাকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ অফিসার উপাসনা গুরুং। যদিও আরাত্রিকার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ মানতে নারাজ তাঁর মা তপতী চন্দ। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে কাউকে শারীরিক নিগ্রহ করেনি। উলটে পুলিশই আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে মারধর করেছে।‘
জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের সহকারি সরকারি আইনজীবী মৃন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আরাত্রিকা চন্দর জামিনের আবেদন খারিজ করে তাঁকে জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে ১১ তারিখ এই মামলার কেস ডায়েরি কল ফর করা হয়েছে।‘ অন্যদিকে, এই বিষয়টির ওপর তড়িঘড়ি বিশেষ সাধারণ সভা ডাকা হয় জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনে। সেখানে সকলের সিদ্ধান্তে আরাত্রিকাকে সাসপেন্ড করা হয়। জলপাইগুড়ি বার অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপুল রায় বলেন, ‘থানায় যেটা হয়েছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক একটি ঘটনা। আরাত্রিকাকে কিছুদিনের জন্য সাসপেন্ড করার পাশাপাশি শোকজ করা হয়েছে। এছাড়াও আমরা একটি তদন্তকমিটি গঠন করেছি। সেই কমিটি এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে অ্যাসোসিয়েশনকে রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে বার অ্যাসোসিয়েশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।‘