রাঙ্গালিবাজনা: এক সময় চা পাতার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। এখন তিনি গৃহশিক্ষক। পড়ান প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের। বাড়ি থেকে ওই গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিমি। তাই সেখানেই ৫০০ টাকায় ঘর ভাড়া করে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ফালাকাটা ব্লকের দেওমালি এলাকায় একটা পাঠাগার খুলে ফেললেন মধ্য দেওগাঁওয়ের বছর সাতাশের তরুণ রবিয়াল হোসেন। রবিবার পাঠাগারের উদ্বোধনে ভীষণ খুশি এলাকার নবম শ্রেণির প্রিয়া বর্মন, একাদশ শ্রেণির মহম্মদ রফিকরা। মাত্র ১০০ খানা বই নিয়েই এদিন পথ চলা শুরু করল এলাকার ‘মাস্টারদা’র পাঠাগার। বিভিন্ন ক্লাসের টেক্সট বই, ব্যাকরণ, সহায়ক বইয়ের পাশাপাশি রাখা হয়েছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির কয়েকটি বইও।
রবিয়ালের কথায়, ‘অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তেমন প্রয়োজন না হলেও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের কয়েকটি বই কিনতেই হয়। অথচ দারিদ্র্যের কারণে অনেকেই বই কিনতে পারে না। স্কুলছুট হওয়ার এটাও একটা কারণ। আমি ধীরে ধীরে বইয়ের সংখ্যা বাড়াতে চাই। আমার ইচ্ছে, ধনীরামপুর-১ ও ২, সাঁকোয়াঝোরা-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলির পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের বছরে কুড়ি টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ফি’র বিনিময়ে বই পড়ার সুযোগ দেওয়া।’
একটি এনজিও’র সঙ্গে যুক্ত রবিয়াল স্কুলছুট পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করার কাজও করেন। তিনি সেই সূত্রেই বেগম রাবেয়া খাতুন হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে দরিদ্র পরিবারের স্কুলছুট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ। এর আগে অনেককেই ব্যক্তিগত টাকায় বই কিনে দিয়েছেন। ওই ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর বইগুলি ফিরিয়ে দিয়েছে রবিয়ালকে। ওই বইগুলি নিয়েই তিনি এলাকার বাপি হোসেনের ১৬ ফুট লম্বা ও ৮ ফুট চওড়া ঘরে পাঠাগারটি খুলেছেন। রবিয়াল বলেন, ‘বাপি আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। ঘরভাড়া এখনও ঠিক করিনি।’
বেগম রাবেয়া খাতুন হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নীতীশচন্দ্র দত্ত বলছেন, ‘লাইব্রেরি চালুর ভাবনা নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন রবিয়াল। আমি উৎসাহ দিয়েছি। চেষ্টা করব রবিয়ালের পাশে দাঁড়ানোর।’ এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্বশিক্ষক সুনীলকুমার বর্মনের কথায়, ‘পিছিয়ে পড়াদের শিক্ষার জন্য কাজ করছেন রবিয়াল। আর শিক্ষাই চেতনা আনে।’ রবিয়ালের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এলাকার অনন্ত রায়, সাবানা ইয়াসমিনরাও।
এলাকার ঢ্যাংপাড়ি বাজার, ফকিরপাড়া সহ সন্নিহিত এলাকায় রবিয়াল দেখেছেন, স্কুলছুট পড়ুয়ার সংখ্যা চমকে ওঠার মতো। তাঁর কথায়, এলাকার ছেলেমেয়েদের মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পেছনে অভিভাবকদের ভূমিকায় অবাক হতে হয়। এঁদের একটা অংশ আজও মনে করেন, ছেলেমেয়েদের বেশি পড়াশোনার দরকার নেই। এই মানসিকতা থেকে মুক্তির একটাই পথ। নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাদানে ওদের পাশে দাঁড়ানো।