গৌরহরি দাস, কোচবিহার : রাতারাতি বদলে গেল গ্রন্থাগারিক নিয়োগের মেধাতালিকা! প্রথম তালিকার সঙ্গে আবার দ্বিতীয় তালিকার বেশ খানিকটা পার্থক্য রয়েছে। প্রথম তালিকায় নাম ছিল এমন বেশ কয়েকজনের পাত্তাই নেই দ্বিতীয়তে। গ্রামীণ গ্রন্থাগারিক নিয়োগ পরীক্ষার মেধাতালিকা নিয়ে এবার অনিয়মের অভিযোগ উঠল কোচবিহার জেলায়। বিষয়টিকে টেকনিক্যাল ভ্রান্তি বলে দায় সেরেছে প্রশাসন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে সরকারি ওয়েবসাইট www.coochbehar.gov.in-এ প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় ১৫৮ জনের নাম ও রোল নম্বর ছিল। কিন্তু পরদিন সকালেই ওয়েবসাইট খুলে দেখা গেল বদলে গিয়েছে তালিকা। যদিও দ্বিতীয় তালিকার তারিখ দেখাচ্ছে একই। সেই তালিকাতেও ১৫৮ জনের রোল নম্বর রয়েছে। তবে প্রথম তালিকার মতো তাতে নাম নেই। আর মোট ১৩টি রোল নম্বর প্রথম তালিকায় ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় তালিকায় নেই। আগামী ১ অক্টোবর এই ১৫৮ জনকে কম্পিউটার টেস্টের জন্য ডাকা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে রাতারাতি কী করে ১৩টি নাম পরিবর্তন হয়ে গেল? বিষয়টি সামনে আসতেই প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলা শাসক রবি রঞ্জন বলেন, ‘একজন কর্মী রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর গুলিয়ে ফেলে ওই ভুল করে ফেলেছিলেন। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পরেই আমরা তা ঠিক করে দিয়েছি।’ পাশাপাশি ওই কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
দুই তালিকার মধ্যে ফারাক কোথায়? দ্বিতীয় তালিকায় প্রথমের মতো নাম তো দেওয়া হয়ইনি। আর যে ১৩টি পরিবর্তন করা হয়েছে, সেটাও করা হয়েছে সুচতুরভাবে। এর আগে তো শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ের নাম একেবারে তালিকার শীর্ষে নিয়ে আসা হয়েছিল। এবার কিন্তু তা করা হয়নি। কারণ তাতে হইচই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দেখা গিয়েছে, প্রথম তালিকার ১২১ থেকে ১৩৩ পর্যন্ত সিরিয়াল নম্বরে থাকা সমস্ত রোল নম্বর দ্বিতীয় তালিকায় বদলে দেওয়া হয়েছে।
কোচবিহার জেলায় মোট ১১০টি লাইব্রেরি রয়েছে। এর মধ্যে ১০২টি গ্রামীণ লাইব্রেরি, ৭টি টাউন লাইব্রেরি ও ১টি উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগার। তীব্র কর্মীসংকটে দীর্ঘদিন ধরেই ধুঁকছে কোচবিহারের গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলি। সেগুলির অবস্থা কতটা করুণ? প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলার ১০২টি গ্রামীণ লাইব্রেরির প্রত্যেকটিতে ২ জন করে অর্থাত্ মোট ২০৪ জন কর্মী থাকার কথা। কিন্তু গোটা জেলায় কর্মী রয়েছেন মাত্র ৩৭ জন। যদি শতকরা কত আসন ফাঁকা, সেই হিসেব কষতে হয়, তাহলে বলতে হবে ৮০ শতাংশেরও বেশি আসন ফাঁকাই। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে কর্মীর অভাবে জেলার ২২টি গ্রামীণ লাইব্রেরি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। যেগুলি খোলা রয়েছে, কর্মীর অভাবে সেগুলিও রোজ খোলে না। সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন করে খোলা হয়। কোনওটি আবার সপ্তাহে একদিন খোলা হয়।
বন্ধ হয়ে থাকার ফলে সেখানে থাকা বইপত্র নষ্ট হতে বসেছে। এই অবস্থায় গ্রামীণ লাইব্রেরিগুলিতে ৩৪ জন লাইব্রেরিয়ান নিয়োগের জন্য গত ২২ অগাস্ট লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার এক মাস বাদে, গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে কোচবিহার জেলা প্রশাসনের সরকারি ওয়েবসাইটে ওই ১৫৮ জনের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। তারপরই তালিকা বদলের অভিযোগ উঠে এসেছে।
প্রথম তালিকায় পরীক্ষার্থীদের নাম ও রোল নম্বর দেওয়া ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় কে কত নম্বর পেয়েছেন, তা দেওয়া ছিল না। তাই তখনই একটা প্রশ্ন উঠেছিল যে যদি নম্বরই না দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে আর কীসের ভিত্তিতে মেধাতালিকা! এই অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা বাদেই প্রথম মেধাতালিকা উধাও করে দিয়ে দ্বিতীয় একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। আর কয়েকদিন বাদেই তো পরবর্তী ধাপের পরীক্ষা। তার আগে তালিকায় আবার রদবদল হয় কি না, সেটাই দেখার।