Thursday, March 28, 2024
Homeরাজ্যউত্তরবঙ্গকবিরাজের উদ্যানকে ঘিরে উপার্জনের স্বপ্ন দেখছেন পরিযায়ীরা

কবিরাজের উদ্যানকে ঘিরে উপার্জনের স্বপ্ন দেখছেন পরিযায়ীরা

সায়নদীপ ভট্টাচার্য, বক্সিরহাট : এলাকার বাসিন্দাদের জন্য কিছু করবেন, এই স্বপ্ন থেকে একার উদ্যোগে শিশু উদ্যান করে তাক লাগিয়েছিলেন তুফানগঞ্জের টাকোয়ামারির পূর্ণচন্দ্র বর্মন। যা ‘কবিরাজের উদ্যান’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। সেই শিশু উদ্যানে প্রতিদিনই ভিড় জমছে। ছোট থেকে বড়দের মনোরঞ্জনের পাশাপাশি ওই উদ্যানকে কেন্দ্র করে এবার উপার্জনের স্বপ্ন দেখছেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। ওই বাসিন্দারা আগে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে ভিনরাজ্যে গেলেও এখন উদ্যানের আশপাশে খেলনা, পুতুল, ফাস্ট ফুডের দোকান খুলে বসেছেন তাঁরা। তবে এই নিয়ে কোনও প্রচারই চান না পূর্ণচন্দ্র। তাঁর ছোট্ট মন্তব্য, ‘মানুষের সেবা করা হল নারায়ণ সেবা। মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য এসব করেছেন তিনি।’

প্রথম দিকে খোলা জায়গায় অস্থায়ীভাবে পসরা সাজিয়ে বসতেন ওই ব্যবসায়ীরা। রোদ-বৃষ্টিতে সমস্যার পাশাপাশি যানজটও হত। সেই সমস্যা মেটাতে এবার ওই ব্যবসায়ীদের জন্য ৪০টির বেশি স্টলও খুলে দিয়েছেন পূর্ণচন্দ্র। ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানিয়েছেন, আর ভিনরাজ্যে কাজ করতে যেতে চান না তাঁরা। কবিরাজের উদ্যানকে ঘিরে কিছুটা হলেও বদলেছে প্রান্তিক গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।

তুফানগঞ্জ মহকুমায় শিশুদের জন্য কোনও উদ্যান ছিল না। তাই বাড়ির পাশে নিজের প্রায় আট কাঠা জমিতে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে উদ্যান তৈরি করেন পূর্ণচন্দ্র। নিজের পেশার জন্য তিনি কবিরাজ হিসেবেই বেশি পরিচিত। উদ্যানে বিভিন্ন মডেল, খেলার সামগ্রীও বসানো হয়েছে। তুফানগঞ্জ তো বটেই, নিম্ন অসম, আলিপুরদুয়ার জেলার কামাখ্যাগুড়ির বাসিন্দারা সেখানে ঘুরতে আসেন। ইউটিউবারদের রমরমাও বাড়ছে।

টাকোয়ামারির মতো প্রান্তিক এলাকায় কর্মসংস্থানের কোনও সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই ভিনরাজ্যে নির্মাণশ্রমিক অথবা প্লাইউড কারখানায় কাজ করতে চলে যেতেন অনেকে। কিন্তু কবিরাজ উদ্যানে ভিড় বাড়ছে খবর পেয়ে সন্তোষ গোপ, ফুলেশ্বর বর্মন, স্বপন বর্মন, দিলীপ বর্মনদের মতো একসময়ের পরিযায়ী শ্রমিকরা উদ্যান সংলগ্ন রাস্তার দু’ধারে খেলনা, পুতুল, ফুচকা, ফাস্ট ফুড, আইসক্রিম ও মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসেন। তাঁদের দেখাদেখি পান-সুপারি, কফি, চা ও আরও নানা ফাস্ট ফুডের দোকান খুলে বসেন স্থানীয় কয়েকজন যুবকও। রাস্তার দু’ধারে সারিসারি দোকান বসে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই পূর্ণচন্দ্রের বাড়ির সামনে যানজট লেগে যেত। তাই এবার তিনি স্টলও খুলে দিয়েছেন। সন্তোষ বললেন, ‘তিন মাস আগেও বাইরে শ্রমিকের কাজ করতাম। পরে বাড়ি ফিরে উদ্যানের পাশে মিষ্টির দোকান খুলেছি। আমাদের অসুবিধার কথা ভেবে মাথার ওপর ছাদের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন পূর্ণবাবু। দোকানে ভালোই বিক্রি হচ্ছে।’

ভিনরাজ্যে গিয়ে পরিবারের থেকে দূরে থেকে দিনরাত পরিশ্রম করার কষ্টের চেয়ে বাড়ি থেকে দোকান খুলে ভালো আয়ের মুখ দেখায় হাসি ফুটেছে এলাকার বাসিন্দাদের। আবার ওই দোকানেই সহকারীর কাজ করে রোজগার করছেন আরও অনেকে। প্রদীপ বর্মন জানালেন, তিনি অন্য রাজ্যে প্লাইউড কারখানায় শ্রমিক ছিলেন। পরে বাড়ি ফিরে চাউমিন, মোমো ও চপের দোকান দিয়েছেন। বেলা বাড়লেই উদ্যানের সামনে ভিড় জমতে শুরু করে। বাড়িতেই থেকে আয়ের মুখ দেখেছেন তিনি। লাভের মুখ দেখেছেন বলে জানালেন পূর্ব বাকলার বাসিন্দা খেলনা বিক্রেতা সঞ্জয় সাহা।

সপরিবারে কবিরাজের উদ্যানে ঘুরতে এসেছিলেন তুফানগঞ্জ শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গোপাল মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘প্রতিবেশীদের কাছে এই উদ্যানের কথা শুনে পরিবারের সকলকে নিয়ে বেড়াতে এসেছি। ঘুরে দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগল। মেয়ের বায়না মেটাতে এই দোকান থেকেই ফুচকা, আইসক্রিম কিনলাম।’

Sourav Roy
Sourav Royhttps://uttarbangasambad.com
Sourav Roy working as a Journalist since 2013. He already worked in many leading media houses in this few years. Sourav presently working in Uttarbanga Sambad as a Journalist & Sud Editor of Digital Desk from March 2019 in Siliguri, West Bengal.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img
[td_block_21 custom_title="LATEST POSTS"]

Most Popular