হেমতাবাদ: নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ হয়ে গেল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মিলন মেলা। হাজার হাজার মানুষ গোটাদিন অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে ফিরে গেলেন। দু’দিন ধরেই বিন্দোল, চৈনগর, বিষ্ণুপুর এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, এবার মিলন মেলা হচ্ছে না। শুক্রবার হেমতাবাদের বৈরাগী মোড়, বিষ্ণুপুর, ভরতপুর, বীরগ্রাম, আসমানহাট সহ একাধিক এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফ জওয়ানরা সীমান্ত যাওয়ার পথে সাধারণ মানুষকে আটকে দেয়। মেলার অনুমতি শেষ পর্যন্ত বিএসএফ দেবে এই আশায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর সন্ধ্যায় তাঁরা বাড়ি ফিরে যান। কাঁটাতারের ওপারেও ছিল কড়াকড়ি। তাই বাংলাদেশিরাও এপারে আসতে পারেননি। রাধিকাপুর, করণদিঘি, ইটাহার, মালদা, শিলিগুড়ি, কলকাতা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে এদিন হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়।
দেশ ভাগের যন্ত্রণাময় স্মৃতিকে উসকে দিয়ে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ ব্লকের ১ নম্বর চৈনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মকরহাট, বিন্দোল এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুষ্ঠিত হয় মিলন মেলা। ২০২০ ও ২১ সালে করোনার কারনে মেলা অনুষ্ঠিত না হলেও ২২ সালের এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাই এবছরও দূর দূরান্তের মানুষ মেলার অনুমতি মিলবে এমন আশায় অপেক্ষা করছিলেন। এদিন বীরগ্রামের কল্পনা রায় বলেন, ‘এই মেলার সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে। প্রতি বছর বহু মানুষ গ্রামে আসেন। আমাদের কিছু আয় হয়। কিন্তু এবছর পুরোপুরি বন্ধ করে দিল বিএসএফ। তাই মন ভালো নেই।’
কাঁটাতারের বেড়া বাংলার মাটিকে আলাদা করলেও আলাদা হয়নি আপামর বাঙালির হৃদয়। বদলায়নি বাংলা ও বাঙালির সমৃদ্ধিশালী ঐতিহ্য। তাই বছরভর অপেক্ষার পর হাজার মানুষের মাঝে মিলেমিশে থাকা প্রিয়জনের চেনা মুখটি খুঁজে পেতে মিলন মেলায় দু’পারের মানুষের মধ্যে থাকে আকুলতা। মিলন মেলায় অংশ নেওয়া দুপার বাংলার মানুষ একে অপরের উদ্দেশ্যে নতুন জামাকাপড়, মিষ্টির প্যাকেট দেন। কিন্তু এবছর সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি দেখা যায় চৈনগর এলাকায়। তবে ওপারে কালীপুজো হয়েছে।
এবিষয়ে হেমতাবাদ থানার আইসি অভিজিৎ দত্ত জানিয়েছেন, এবছর মেলার অনুমতি ছিল না। শুধু পাথরকালীতে কালীপুজা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে মেলার অনুমতি মেলেনি এবং সীমান্তের কাছাকাছি কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে বিএসএফ সূত্রে।