নয়াদিল্লি: শনিবার বেজে উঠল সংসদীয় দামামা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল সংসদের বাদল অধিবেশনের নির্ঘণ্ট। আগামী ২০ জুলাই শুরু হবে এবারের বাদল অধিবেশন, যার সমাপ্তি হবে ১১ অগাস্ট। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরোনো সংসদ ভবনেই শুরু হতে পারে এবারের বাদল অধিবেশন, পরে যা শেষ হবে নতুন সংসদ ভবনে। এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আসন্ন বাদল অধিবেশনের সার্বিক নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী টুইটে লেখেন, ‘সমস্ত রাজনৈতিক দলকে উর্বরশীল ও ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সংসদীয় কার্যকলাপে অংশ নিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এবারের বাদল অধিবেশনে মোট ১৭ দিন সংসদীয় অধিবেশন বসার কথা। এরই মধ্যে সংসদে পেশ করা হতে পারে দিল্লি সরকারের অধীনস্ত আইএএসদের নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসা দিল্লি অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত বিল, ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং ডেটা প্রোটেকশনের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি।
প্রত্যাশিতভাবেই, শনিবার সরকারের তরফে সংসদের বাদল অধিবেশনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নড়েচড়ে বসেছে বিরোধী শিবির। অধিবেশন শুরুর একসপ্তাহ আগে ব্যাঙ্গালুরুতে বসতে চলেছে বিরোধীদের দ্বিতীয় দফার বৈঠক যেখানে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে রণনীতি তৈরির চেষ্টা করবে বিজেপি বিরোধী সমমনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলগুলি। আগামী ১৩-১৪ জুলাই হওয়ার কথা এই বৈঠক। একইসঙ্গে আসন্ন বাদল অধিবেশনে সংসদীয় কক্ষ সমন্বয়, রণণীতি নিয়েও আলোচনা সারবে বিরোধীরা। সূত্রের দাবি, ব্যাঙ্গালুরুর বৈঠকেই স্থির হবে সংসদীয় অলিন্দে কোন কোন ইস্যুকে হাতিয়ার বানিরে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগা হবে, তার রূপরেখাও।
এই ক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার, বিগত বাজেট অধিবেশনের সময় বিরোধী শিবিরের সংসদীয় সমন্বয়ে দেখা গিয়েছিল একাধিক ফাঁকফোকর। মোদি সরকার বিরোধী এজেন্ডায় সব বিরোধী দলগুলি সেবার একজোট হয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে বিরোধাভাষ ছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের কক্ষ সমন্বয়েও। এমনকি সরকারি নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে সংসদের উভয় কক্ষের ওয়েলে নেমে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন বা ধরনার ক্ষেত্রেও ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শিবিরের রূপ দেখতে পাওয়া যায়নি। বাজেট অধিবেশনে বিরোধী শিবিরের পারস্পরিক দূরত্বের সুযোগ নিয়েছিল সরকারপক্ষ, দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের।
তবে সাম্প্রতিক আবহে গত তিন মাসে বিরোধী শিবিরের সমমনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের পারস্পরিক মতানৈক্যের ঊর্ধ্বে উঠে বিজেপি বিরোধিতায় আগের চাইতে অনেক বেশি একাত্ম হয়েছে। গত ২৩ জুন পাটনায় জেডিইউ সুপ্রিমো, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের আহ্বানে মুখোমুখি বৈঠকের টেবিলে বসা বিরোধী শিবিরকে আগের তুলনায় অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ দেখিয়েছে। তবে সেখানেও আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেসের মতান্তর নজর কেড়েছে সবার। দিল্লি অর্ডিন্যান্স ইস্যুতে দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই মতভেদ যাতে সংসদীয় অলিন্দে বিরোধীদের সামগ্রিক ঐক্যে ফাটল না ধরাতে পারে তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন বিরোধী শিবিরের বর্ষীয়ান নেতারা, সূত্র মারফত এমনই দাবি জানানো হয়েছে।
এই মর্মেই সামনে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের টুইট৷ শনিবার বিরোধী ঐক্যর গুণগান গেয়ে ডেরেক দাবি করেন, ‘সমস্ত বিরোধী শিবির গণতন্ত্র রক্ষার জন্য একজোট হয়ে লড়ছে৷ পাটনা সামিটের পরে ব্যাঙ্গালুরুর দ্বিতীয় দফার বিরোধী বৈঠকে সেই সমস্ত বিষয়গুলি নিয়েই চর্চা হবে যেখানে বিরোধীরা ১০০ শতাংশ সহমত।’ তবে ডেরেক এও জানাতে ভোলেননি যে কয়েকটি ইস্যুতে বিরোধী শিবিরের দলগুলির সর্বসম্মতি নেই। তাঁর কথায়, ‘কয়েকটি এমন ইস্যু আছে যেখানে সব দলগুলি একই পথের পথিক নাও হতে পারে। এই বাধ্যবাধকতা বোধগম্য৷ কিন্তু তৃণমূল স্তরে মোদী বিরোধিতায় আমরা সবাই এক।’ সরকারি অবস্থানকে কটাক্ষ করতে এদিন পিছপা হননি বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ। টুইটে তাঁর মন্তব্য, ‘এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সাধারণ মানুষের স্বার্থ জড়িত আছে এমন ইস্যু গুলি নিয়েও সংসদে আলোচনা করবে সরকার। এই ক্ষেত্রে সেই সব ইস্যুগুলিকেও যেন প্রাধান্য দেওয়া হয় যে ইস্যুগুলি নিয়ে মৌনতা ধারণ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।’ অগ্নিগর্ভ মণিপুরে শান্তি ফেরাতে সংসদে জরুরি আলোচনার দাবি জানাবে কংগ্রেস, এদিন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের প্রচ্ছন্ন ‘ইঙ্গিত’-এ তা স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।