রতুয়াঃ পরিবারের সবার সঙ্গে ইদ পালন করবেন বলে কাঁচড়াপাড়ার বাড়ি থেকে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন এনডিআরএফ কর্মী মহম্মদ এক্তিয়ার এলাহি(৩৩)৷ লোকাল ট্রেনে শিয়ালদা পৌঁছে মালদার ট্রেন ধরার কথা ছিল তাঁদের৷ এরই মধ্যে ঘটে যায় দুর্ঘটনা৷ কাঁকুড়গাছি স্টেশনের কাছে চলন্ত ট্রেন থেকে নীচে পড়ে যান তিনি৷ সেখানকার জিআরপি থানার পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে৷ সেখান থেকে তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি৷ ৩৬ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হার মানেন এক্তিয়ার৷ শুক্রবার তাঁর কফিনবন্দি দেহ ফিরে এসেছে রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের নরোত্তমপুর গ্রামে৷ এনডিআরএফের তরফে গান স্যালুট দেওয়ার পর এদিনই তাঁকে কবরস্থ করা হয়েছে৷ গ্রামের ছেলের অকাল মৃত্যুতে ইদের আনন্দ ছাপিয়ে শোকের আবহ নরোত্তমপুরে।
২০১১ সালে বিএসএফে যোগদান করেছিলেন এক্তিয়ার৷ ২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে এনডিআরএফে যোগ দেন তিনি৷ পোস্টিং ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগণার হরিণঘাটায়৷ স্ত্রী আরমিনা, ন’বছরের ছেলে আর পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে কাঁচড়াপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন৷ প্রতিবারই ইদের সময় পরিবার নিয়ে তিনি চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে৷ বিধবা মা আর ভাইবোনদের সঙ্গে ইদ পালন করে ফিরে যান কর্মক্ষেত্রে৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ মঙ্গলবার রাতে পরিবার নিয়ে লোকাল ট্রেনে শিয়ালদার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইদের খুশি আর তাঁর ভাগ্যে জোটেনি।
এক লহমায় বিবি থেকে বেওয়া হয়ে যাওয়ার আঘাতটা এখনও মেনে নিতে পারছেন না আরমিনা৷ তিনি বলেন, “গ্রামে ইদ পালন করব বলে মঙ্গলবার আমরা সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম৷ কাঁচড়াপাড়া থেকে গেঁদে লোকালে শিয়ালদা আসছিলাম৷ কাঁকুড়গাছির কাছে ও থুতু ফেলতে ট্রেনের দরজায় গিয়েছিল৷ তখনই ভারসাম্য হারিয়ে ও ট্রেন থেকে নীচে পড়ে যায়৷ তিনি কলকাতা এনডিআরএফের সেকেন্ড ব্যাটেলিয়নে কর্মরত ছিলেন৷ ডিপার্টমেন্টের তরফে আমাকে সবরকম সহায়তা করা হয়েছে৷ ইতিমধ্যে এক লক্ষ টাকার চেক আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ অন্তিম সংস্কারের জন্য দেওয়া হয়েছে নগদ আট হাজার টাকা৷ আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ৷ ভবিষ্যতেও তাঁরা আমার পাশে থাকবেন এমন আশ্বাস দিয়েছেন৷”