বীরপাড়া: বয়স বছর ৩৫। তরুণটির নাম-ঠিকানা জানেন না কেউই। তবে দিনভর তাঁর দেখা মেলে বীরপাড়ার অলিগলিতে। পেশা প্লাস্টিক কুড়িয়ে বিক্রি। এভাবেই দু’পয়সা রোজগার করেন তিনি। এলাকাবাসীর কাছে তাঁর পরিচয় ‘পাগল’ হিসেবে। স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, তাঁর উপার্জনের বেশিরভাগটাই ব্যয় হয় নেশার পিছনে। কথা বলতে চান না সহজে। তবে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর তাঁর পশুপ্রেমকেই স্যালুট করছেন নেটিজেনরা।
শনিবার বীরপাড়ার মহাত্মা গান্ধি রোডে ভিডিওটি রেকর্ড করেন বীরপাড়ারই তরুণ ধনঞ্জয় তালুকদার। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় বসে থাকা তরুণটির পাশে রয়েছে কয়েকটি পথকুকুর। পকেট থেকে বিস্কুট বের করে মাঝেমধ্যেই কুকুরগুলিকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছেন তিনি। ধনঞ্জয় বলেন, ‘এর আগেও তাঁকে এ কাজ করতে দেখেছি। পশুর প্রতি তাঁর ভালোবাসা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন ওই তরুণ। তাঁকে নেশার কবল থেকে মুক্ত করতে প্রশাসন এগিয়ে এলে ভালো হয়।’
সোমবার পর্যন্ত ভিডিওটি দেখেছেন ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন অনেকে। বীরপাড়ার পশুপ্রেমী তরুণ অভিষেক গুহনিয়োগীর কথায়, ‘দৃশ্যটি সবার জন্য একটি শিক্ষা। সুস্থ, স্বাভাবিক, শিক্ষিত লোকজনও অনেক সময় নিরীহ পশুকে নিপীড়ন করেন। অথচ একজন ভবঘুরে পথকুকুরকে বিস্কুট খাইয়ে বেড়াচ্ছেন। এই সহানুভূতি, মমত্ববোধটাই প্রয়োজন।’ রাঙ্গালিবাজনার জাহাঙ্গির আলম আরও একধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘হয়তো তিনি পাগল বলেই পশুদরদি। না হলে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন।’
এলাকার আর এক বাসিন্দা শান্তজ্যোতি বসু অবশ্য বলছেন, ‘তরুণটি পাগল নন, সবাই ভালোবেসে তাঁকে পাগলা বলে ডাকে। কেউ কেউ ৫-১০ টাকাও দেন। যতদূর জানি, তিনি যক্ষ্মারোগে ভুগছেন।’ পেশায় শিক্ষক বিশ্বদীপ দত্ত জানান, তাঁর পশুপ্রেমকে কুর্নিশ করি। তবে তিনি নেশায় আসক্ত হলে তাঁকে সুস্থ ও স্বাভাবিক করে তুলতে পদক্ষেপ জরুরি। মাদারিহাট-বীরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির বীরপাড়ার সদস্যা তথা নারী শিশু ও শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শিউলি চক্রবর্তী বলেন, ‘বীরপাড়ার কিছু যুবক এমনকি বহু শিশুও নেশায় আসক্ত। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সোমবার থেকেই এনিয়ে শিলিগুড়িতে সাতদিনের প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নিচ্ছি। নেশামুক্তির লক্ষ্যে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’