সানি সরকার, শিলিগুড়ি: দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে খুলে দেওয়া হল লাচেনের রাস্তা। এখনই পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি না মিললেও টানা ছয় মাস পর রাস্তাটি খুলে যাওয়ায় হাসি ফিরেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মুখে। কিন্তু এই হাসি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কেননা, বৃহস্পতিবারই নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার জন্য ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (NH 10) বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি করেছে কালিম্পং জেলা প্রশাসন (Kalimpong administration)। ১৩ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ১৫ এপ্রিল সকাল ৬টা পর্যন্ত রবিঝোরা থেকে ২৯ মাইল পর্যন্ত রাস্তাটি বন্ধ থাকবে বলে জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ ছুটির দিনের পর্যটন ব্যাপকভাবে মার খাওয়ার আশঙ্কা দানা বেঁধেছে।
দিনের পর দিন জাতীয় সড়কটি বন্ধ থাকায় তার প্রভাব পর্যটনে পড়ায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। যদিও পথ নিরাপত্তার স্বার্থেই রাস্তাটি দু’দিনের জন্য নতুন করে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বলে জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য। কালিম্পংয়ের জেলা শাসক বালাসুব্রহ্মনিয়ান টি বলছেন, ‘প্রবল বর্ষণের জেরে রবিঝোরা এবং লিকুভিরে ধস নামছে। ওপর থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মেরামতির কিছু কাজ করবে পূর্ত দপ্তর। ওই কাজের জন্য জাতীয় সড়কটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
৪ অক্টোবর সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয়ে ত্রাস হয়ে উঠেছিল তিস্তা। তিস্তার গ্রাসে একাধিক রাস্তার সঙ্গে চলে গিয়েছিল চুংথাং-লাচেনের সংযোগ স্থাপনকারী রাস্তার বড় একটি অংশ। ওই ঘটনার পর থেকে কার্যত লাচেন বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল। যার জন্য গত ছয় মাসে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিকিমের পর্যটন। লাচেনের রাস্তা খুলে দেওয়ার দাবি ওঠে পর্যটন মহল থেকে। বৃহস্পতিবার মংগনের জেলা শাসক হেমকুমার ছেত্রী এক নির্দেশিকা জারি করে এদিন থেকেই চুংথাং-লাচেন রাস্তাটি খুলে দেওয়ার কথা জানান। তবে রাস্তা খুললেও পর্যটকদের গাড়ি চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে দু’একদিনের মধ্যে পর্যটকদের জন্যও রাস্তাটি খুলে দেওয়া হবে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। লাচেনের হোটেল ব্যবসায়ী রাহুল গুপ্তা বলছেন, ‘আশা করছি পর্যটকদের গাড়ির ক্ষেত্রে বেশিদিন নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। রাস্তা খুলে যাওয়ার খবরে আমরা খুশি।’
এদিকে, নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার জন্য ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার নির্দেশিকা জারি হতেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে পর্যটন মহলে। ইদ থেকে নববর্ষ, মাঝে একদিন অফিস ফাঁকি দিলেই ছুটে যাওয়া যাচ্ছে পাহাড়ে। ফলে অনেকেই সিকিমের পাশাপাশি কালিম্পংয়ে বেড়াতে গিয়েছেন বা যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করেছেন। যাঁরা ইতিমধ্যে বেড়াতে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরতে হবে লাভা-গরুবাথান হয়ে। যাঁরা যাবেন, তাঁদেরও এই পথ ধরতে হবে। বারবার রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পর্যটনে পড়তে শুরু করেছে বলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য।
কালিম্পংয়ের পর্যটন ব্যবসায়ী সুশীল ছেত্রী বলছেন, ‘জাতীয় সড়কের মতো গুরুত্ব রাস্তা সচল রাখতে কেন সরকারি তরফে স্থায়ী ব্যবস্থা করা হচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।’