প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: গজের চলন কোনাকুনি। ঘোড়ার আড়াই চাল। আপনি যদি দাবাপ্রেমী হন, তাহলে এসব বুলি অজানা থাকার কথা না। তবে যেটা জানার মতো, তা হল, এবার থেকে ইচ্ছা হলে সঙ্গী জুটিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডেই দাবার (Chess) বোর্ড সাজিয়ে বসতে পারেন। সেই সুযোগ করে দিচ্ছে আলিপুরদুয়ারের পুলিশ। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত দাবা খেলার সুযোগ মিলবে আলিপুরদুয়ার শহরের ফুসফুস প্যারেড গ্রাউন্ডেই (Parade Ground)। সেখানে ৩ থেকে ৫টি দাবা খেলার টেবিল রাখা হবে। মঙ্গলবার থেকে এই সুযোগ পাবেন শহরের দাবাপ্রেমীরা।
ব্যতিক্রমী নানা পদক্ষেপের জন্য আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার পুলিশের সুখ্যাতি রয়েছে। এই তো, কয়েকদিন আগেই স্ট্রিট আর্ট ও ব্যান্ডের গানের মধ্য দিয়ে মাদকমুক্ত রাস্তা নামক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নেশামুক্তির বার্তা দিয়েছিল তারা। এবার তাদের নতুন চমক, প্যারেড গ্রাউন্ডে দাবা খেলার ব্যবস্থা।
ব্যবস্থা করবে পুলিশ। ইচ্ছুকরা খেলতে পারবেন। আর প্রতিটি টেবিলে খেলা দেখতে ভিড় জমে উঠবে। পুলিশকর্তাদের আশা, এতে যুবসমাজের একটা অংশের মধ্যে দাবা খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। তাতে মাদকসেবনের পথে হাঁটার আশঙ্কা কমবে। আর সেইসঙ্গে প্যারেড গ্রাউন্ডের ইতিউতি যে নেশার আসর বসার অভ্যাস তৈরি হয়েছে, সেটাও কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সময় প্যারেড গ্রাউন্ডে মাদকাসক্তদের আসর বসে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। এবার নতুন এই দাবা-দাওয়াই তাদের। এবিষয়ে পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘দাবা খেলার প্রতি যুবসমাজের আগ্রহ তৈরি করতেই এই উদ্যোগ। এতে মাঠে নজরদারির সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলোর পরিবেশও তৈরি হবে।’
রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় গড়িয়াহাট অঞ্চলে উড়ালপুলের নীচে এমন দাবা খেলার আসর বসে বহুদিন। সেই আসরের আয়োজনের সঙ্গে অবশ্য স্থানীয় প্রশাসন নয়, সেখানকার দাবাপ্রেমীরাই জড়িয়ে। উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার বা অন্য সব শহরেই দাবা খেলার একটা জনপ্রিয়তা থাকলেও এভাবে খোলা রাস্তায় বা মাঠে নিয়মিত দাবার আসর বসার নজির সেভাবে নেই। পুলিশ বলছে, প্রতিদিনই বিকালের পর দাবা খেলার আয়োজন করা হবে। টেবিল তৈরি থাকবে। আর নজরদারির জন্য সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিশকর্মীরাও থাকবেন। যে কেউ দাবা খেলার জন্য অংশ নিতে পারবেন। এছাড়া পরিচিত দাবাড়ু ও যেসব সংগঠন দাবা খেলার সঙ্গে যুক্ত, তাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। বর্ষাকালে মাথা বাঁচাতে ছাউনিরও ব্যবস্থা করবে পুলিশই। মাঝেমধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
জেলায় শতাধিক দাবা খেলোয়াড় রয়েছেন। তাঁরা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শহরের বিশিষ্টজনেরাও। আলিপুরদুয়ার জেলা দাবা সংস্থার চেয়ারম্যান মৃণাল ঘোষ বলেন, ‘পুলিশের এই উদ্যোগ অভিনব। এতে যুবসমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দাবা খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে।’