অনির্বাণ চক্রবর্তী, কালিয়াগঞ্জ: সকাল দশটা। কড়াইতে খাসির মাংস কষছিল পুরোদমে। শাড়ির আঁচল কোমড়ে পেঁচিয়ে অনবরত কড়াইতে হাতা নেড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। হাতে সময়ও আর বেশি নেই। কিছুক্ষণ বাদে হোটেলে খরিদ্দাররা আসতে শুরু করবেন। তাই এত তাড়াহুড়ো। তারমাঝেই রাজনৈতিক ঝান্ডা ছেড়ে কিভাবে হাতা-খুন্তি ধরলেন তারই স্মৃতি রোমন্থন করলেন একসময়ের দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃণমূল কাউন্সিলার সবিতা সাহা। যদিও কালিয়াগঞ্জের মানুষের কাছে তিনি চাউমিন বৌদি নামেই পরিচিত।
চাউমিন বৌদি, এমন নামে পরিচিত হলেন কিভাবে? সবিতাদেবীর সপাট জবাব, ‘এক সময় আমার ফাস্ট ফুডের দোকান ছিল। এলাকার খদ্দেররা আমার দোকানের চাউমিন খেতে খুব ভালোবাসতেন। সেই থেকেই চাউমিন বৌদি বলেই আমায় ডাকতে শুরু করেন।’ চাউমিন বৌদির আক্ষেপ, ‘আমার রাজনৈতিক জীবনের কর্মকাণ্ড স্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছে। আজকের তৃণমূল নেতারা আমায় ভুলেই গিয়েছেন। সেই দুঃখে আমিও আর খোঁজ খবর নেই না দলের।’
উল্লেখ্য, বাম জমানায় কালিয়াগঞ্জে কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডে প্রথম মহিলা তৃণমূল কাউন্সিলার হয়েছিলেন কালিয়াগঞ্জের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন পাড়ার বাসিন্দা সবিতা সাহা। ২০০৯ সালের পুরসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের দাপটের মাঝে ওয়ার্ডের মানুষের মনজয় করে নিয়েছিলেন চাউমিন বৌদি। তারপর কেটে গিয়েছে অনেক বছর। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মতো ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্য জয়ের পর নবাগত ধোপদুরস্ত পাঞ্জাবি পরিহিত উঠতি তৃণমূল নেতাদের সামনে কাউন্সিলার চাউমিন বৌদি রাজনৈতিক আঙিনায় ক্রমশ ম্লান হতে শুরু করেন। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জাঁতাকলে পড়ে চোখের পলকে সামনের সারি থেকে পেছনের দিকে চলে যান তৃণমূল নেত্রী সবিতা সাহা৷
তাঁর কথায়, ‘তৃণমুল পরিচালিত কালিয়াগঞ্জ পুরসভায় ব্যক্তিগত দুটি কাজ নিয়ে গিয়েছিলাম। সুরাহা হয়নি। বর্তমান শহর তৃণমূল সভাপতি রাজিব সাহাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।’ তাই কি? রাজিব সাহা্র সাফাই, ‘ওঁনার ব্যক্তিগত অসুবিধা নিয়ে আমার পক্ষে যতখানি সম্ভব ততটাই সহযোগিতা করেছি। উনি এখন হোটেল ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। ওঁনার মত মহিলা নেত্রী আমাদের দলের সম্পদ।’
তাহলে কি দলের হয়ে প্রচারে দেখা যাবে আপনাকে? প্রশ্নের জবাবে তিক্ততা প্রকাশ করে সবিতাদেবীর জবাব, ‘রাজনীতির খুঁড়ে আমার শতকোটি নমষ্কার। আর রাজনৈতিক নেত্রী নই, কালিয়াগঞ্জের জনমানসের কাছে আমি চাউমিন বৌদি হিসেবেই বাকিটা জীবন বাঁচতে চাই।’