Thursday, March 28, 2024
Homeরাজ্যউত্তরবঙ্গজলপাইগুড়ি মেডিকেলে রক্ত পরীক্ষা করাতে এসে নাজেহাল রোগীরা

জলপাইগুড়ি মেডিকেলে রক্ত পরীক্ষা করাতে এসে নাজেহাল রোগীরা

সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি : বাড়তি দায়িত্বে নারাজ নাকি ইগোর সমস্যা? উত্তরটা এখনও অস্পষ্ট। তবে এটা পরিষ্কার যে এর জেরে রোগীদের সমস্যা দিন কে দিন বেড়েই চলেছে। চিকিত্সকের পরামর্শ ছিল পরীক্ষার জন্য খালিপেটে রক্ত দিতে হবে। সেই মতোই সকাল থেকে কিছু না খেয়ে তারামণি রায় জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বেডে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বেলা ১০টা বেজে গেলেও রক্ত সংগ্রহে কেউ সেখানে উপস্থিত হননি। তারামণি সিস্টারের কাছে এবিষয়ে প্রশ্ন করেও কোনও উত্তর পাননি। শেষপর্যন্ত বেলা ১১টা নাগাদ তারামণির রক্ত সংগ্রহ করা হয়।

এই হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা গত এক সপ্তাহ ধরে এমনই সমস্যায় পড়েছেন। কী কারণে এই সমস্যা? খোঁজ নিয়ে দেখা গেল সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের রক্তের নমুনা হাউস স্টাফরা সংগ্রহ করবেন। ল্যাবরেটরি টেকনিসিয়ানরা এতদিন এই কাজটি করতেন। তবে নতুন নির্দেশিকা জারি হলেও হাউস স্টাফরা রক্ত সংগ্রহের কাজটি করতে চাইছেন না। আর এর জেরেই সাধারণ রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন।

জলপাইগুড়ি মেডিকেলের এমএসভিপি ডাঃ কল্যাণ খান বলেন, ‘মেডিকেল কলেজগুলিতে মূলত হাউস স্টাফ ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরাই রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন। এখানেও সেই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। শুনেছি কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি দেখার জন্য প্রতিটি বিভাগের প্রধানদের বলা হয়েছে। আশা করছি, সমস্যা দ্রুতই মিটে যাবে।’ এই বিষয়ে হাউস স্টাফরা সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে একটি সূত্রের খবর, তাঁরা বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে চান না। জোর করে নতুন দায়িত্ব তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টিকে তাঁরা কোনওমতেই মেনে নিতে চাইছেন না।

হাসপাতালে ভর্তি তারামণির কথায় ফেরা যাক। তাঁর কথায়, ‘খালি পেটে থাকতে আগের রাতেই আমাকে বলা হয়েছিল। আমি সেইমতোই অপেক্ষা করছিলাম। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে আমার খিদে পেয়ে যায়। রক্ত দেব বলে খালি পেটে অপেক্ষা করায় খুবই কষ্ট হচ্ছিল। বিষয়টি সিস্টারদের জানাই। কিন্তু কখন রক্ত নেওয়া হবে সে বিষয়ে সিস্টাররাও কিছু জানাতে পারেননি। পরে জানতে পারলাম যাঁরা এই দায়িত্বে রয়েছেন তাঁদের কিছু সমস্যা হয়েছে।’ হাউস স্টাফদের ওপর রক্ত সংগ্রহের দায়িত্ব চাপানোয় তাঁদের মধ্যে ইগোর সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে একটি মহলের দাবি। তবে এবিষয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

জেলা হাসপাতাল থাকাকালীন এখানে দুটি আলাদা ল্যাবরেটরি ছিল। একটি জেলা হাসপাতাল ও একটি সুপারস্পেশালিটি বিভাগে। মেডিকেল কলেজ চালু হওয়ার পর কাজের সুবিধের জন্য সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে একটি সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি চালু করা হয়। বর্তমানে জেলা হাসপাতাল বিভাগে একটি কালেকশন সেন্টার রয়েছে। জেলা হাসপাতাল থাকার সময় ল্যাবরেটরি টেকনিসিয়ানরা ওয়ার্ডে গিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতেন। মেডিকেল কলেজ চালু হওয়ার পর রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রক্ত পরীক্ষাও বেড়েছে। প্রতিদিন মেডিকেল কলেজের সমস্ত বিভাগ মিলিয়ে গড়ে  ২৫০-৩০০টি রক্তের নমুনা ল্যাবরেটরিতে যায়। টেকনিসিয়ানরা এত রক্তের নমুনা সংগ্রহের পর সেগুলি ল্যাবরেটরিতে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করাতে অনেকটাই দেরি হত। ফলে রিপোর্ট তৈরিতেও দেরি হত। আর এর জেরে রোগীর চিকিত্সাতেও দেরি হত। ল্যাবরেটরিতে কাজের গতি আনতে কর্তৃপক্ষের তরফে নতুন নিয়ম চালু করা হয়। হাউস স্টাফরা রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবেন বলে সেখানে বলা হয়। প্রয়োজনে শিক্ষানবিশ সিস্টাররা তাঁদের সাহায্য করবেন বলেও বলা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, হাউস স্টাফরা এই নির্দেশ ঠিকমতো পালন করছেন না।

আর এর জেরে রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন। জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয় অসীম সেনগুপ্ত বললেন, ‘চিকিত্সক ও কর্মীদের নিয়ে কী সমস্যা হয়েছে আমাদের জানার কথা নয়। কিন্তু তার জেরে বেলা গড়িয়ে গেলেও রোগীদের রক্তের নমুনা ঠিকমতো সংগ্রহ না করার বিষয়টি সমর্থনযোগ্য নয়।’ হাসপাতালের এক বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক বললেন, ‘রিপোর্ট দেরিতে আসায় চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হচ্ছে। অনেক সময় রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে রোগীদের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। সময়মতো রিপোর্ট না পাওয়ায় রোগীদের ছুটি দিতেও সমস্যা হচ্ছে।’

Sourav Roy
Sourav Royhttps://uttarbangasambad.com
Sourav Roy working as a Journalist since 2013. He already worked in many leading media houses in this few years. Sourav presently working in Uttarbanga Sambad as a Journalist & Sud Editor of Digital Desk from March 2019 in Siliguri, West Bengal.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img
[td_block_21 custom_title="LATEST POSTS"]

Most Popular