উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে সই করছেন না রাজ্যপাল। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করল দেশের শীর্ষ আদালত। অভিযোগ বিজেপি বিরোধী রাজ্য গুলোতে রাজ্যপালরা ঝুলিয়ে রাখছেন বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল। এমনই বেশ কিছু রাজ্যে এই অভিযোগ নিয়ে মামলা হয়ে ছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বধীন শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ শুক্রবার বলেছে, ‘‘বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিৎ যথাযথভাবে। কিন্তু বিল ঝুলিয়ে রাখা খুবই গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।’’
রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল সই না করে রাজ্যপাল ঝুলিয়ে রাখায় সমস্যায় পড়েছে বিজেপি বিরোধী রাজ্য পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ সহ আরও বেশ কয়েকটি বিজেপি বিরোধী রাজ্য। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে পঞ্জাব ও তামিলনাড়ু। পঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ)-র মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মান সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে সংঘাত সামনে এসেছে সে রাজ্যের রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন বিজেপি নেতা বানোয়ারীলাল পুরোহিতের। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিধানসভায় পাশ হওয়া বেশ কয়েকটি বিল সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছেন। এই ঘটনায় পঞ্জাব সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। শুক্রবার পঞ্জাবের রাজ্যপালের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আপনি আগুন নিয়ে খেলছেন। এক জন রাজ্যপাল কী ভাবে এমন করতে পারেন? পাঞ্জাবে যা হচ্ছে তাতে আমরা খুশি নই। আমরা কি সংসদীয় গণতন্ত্র বজায় রাখব?’’
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, একই অভিযোগে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কেরল এবং তামিলনাড়ুর সরকারও। সেখানেও রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত চরমে উঠেছে। সরকারের পাশ করা বিল ঝুলিয়ে রেখেছেন রাজ্যপালেরা। এমনটা হওয়া দেশের পক্ষে মঙ্গল নয়। রাজ্যপালদের বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিৎ। তাঁদের মনে রাখতে হবে, রাজ্যপাল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। বিধানসভা কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তাকে গুরুত্ব দেওয়াটা জরুরি।’’
পঞ্জাবে রাজ্যপালের হয়ে সওয়াল করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি এদিন সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিলেন, মোট ২৭টি বিল বিধানসভায় পাশ হলেও তার মধ্যে ২২টিতে রাজ্যপাল বানোয়ারীলাল ছাড়পত্র দিলেও পাঁচটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রেখেছেন। শুক্রবার সওয়াল-পর্বে মান সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘ওই সাতটি বিল গত জুলাই এবং তারও আরও আগে রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেননি।’’
তামিলনাড়ুতেও রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাত রাজ্যপাল আরএস রবির সঙ্গে। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে নেতা স্ট্যালিনের বিধানসভায় পাশ হওয়া একাধিক বিলে সই করেননি রাজ্যপাল। এর প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসে চেন্নাইয়ের রাজভবনে আয়োজিত চা চক্রের অনুষ্ঠান বয়কট করেছিলেন স্ট্যালিন এবং তাঁর মন্ত্রীরা।
একই অভিযোগ শোনা যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেরলের বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের মুখে। গত কয়েক বছরে একাধিক বার রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে সই না করে ফেলে রাখার অভিযোগ তুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার শীর্ষ আদালতের মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে বিজেপি বিরোধী নেতাদের একাংশ মনে করছেন।