সৌরভ কুমার মিশ্র, হরিশ্চন্দ্রপুর: তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের ব্লক সভানেত্রীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে পোস্টার পড়ল নিজের এলাকাতেই। পোস্টারে লেখা, ব্লক সভানেত্রী হরিশ্চন্দ্রপুরে বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে যুক্ত। তাই অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এমনকি ওই মহিলা নেত্রীকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে পোস্টারে। ঘটনার জেরে শোরগোল পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসীহাটা এলাকায়। যদিও অভিযুক্ত ব্লক সভানেত্রী সুজাতা সাহা এটাকে বিরোধীদের চক্রান্ত বলেই মনে করছেন। তাঁর দাবি, বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারি মামলায় হাইকোর্ট থেকে ইতিমধ্যেই তিনি জামিন পেয়েছেন। তবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই দলেরই নেত্রীর বিরুদ্ধে এই ধরণের পোস্টার পড়ায় অস্বস্তিতে হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রের খবর, বন্যা-ত্রাণ দুর্নীতিতে অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের হরিশ্চন্দ্রপুর ১ (বি) ব্লক সভানেত্রী তথা হরিশ্চন্দ্রপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা সুজাতা সাহা। তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছে তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়োল এলাকায়। কোনও পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘সুজাতা সাহা হাটাও তৃণমূল বাঁচাও’, ‘বন্যা ত্রাণ দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড সুজাতা সাহাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে’, কোনও পোস্টারে আবার লেখা, ‘দুর্নীতিবাজকে প্রার্থী করলে একটিও ভোট নয়,’ কোথাও লেখা, ‘দুর্নীতিবাজ নেত্রী সুজাতা সাহার গ্রামে ঢোকা বারণ’। বৃহস্পতিবার সকালে এই ধরণের একাধিক পোস্টার স্থানীয়দের নজরে আসে। যদিও সুজাতা সাহার সাফাই, এটা বিজেপি এবং কংগ্রেসের চক্রান্ত। তাঁকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা। তাঁর সম্মানহানির জন্য এসব করা হচ্ছে।
মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেনও মনে করছেন, পোস্টারকাণ্ডে বিরোধীদের হাত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে তিনি জানান, পুলিশ ও প্রশাসন ঘটনাটি খতিয়ে দেখবে।
যদিও গোটা ঘটনায় তৃণমূলকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল। তিনি জানান, এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। দল দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে। এগুলি তারই প্রতিফলন।
২০১৭ সালে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় ভয়াবহ বন্যা হয়। বন্যা দুর্গতদের জন্য আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু বন্যা-ত্রাণের টাকা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে শাসকদলের একাধিক নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩ কোটি ৫৪ লক্ষ এবং বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতে ৭৬ লক্ষ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। এই কাণ্ডে গ্রেপ্তার হন শাসকদল পরিচালিত বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সোনামনি সাহা সহ তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রী। নাম জড়িয়ে যায় সুজাতারও। যদিও পরে তিনি ওই মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।