ক্রান্তি: সরকারি নিয়ম যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে ফাঁকও। আর সেই ফাঁক গলেই সরকারি ও বেসরকারি দুই স্কুলে পড়ছে একই পড়ুয়া। এমনটাই হচ্ছে ক্রান্তি ব্লকের একাধিক স্কুলে। যদিও গোটা জলপাইগুড়ি জেলায় এমন নজির রয়েছে বলে জানাচ্ছেন জেলার শিক্ষাকর্তারা। সেইমতো শুরু হয়েছে ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ।
বাংলার শিক্ষা পোর্টালে বেসরকারি স্কুলগুলোরও নাম নথিভুক্ত করা এখন কার্যত বাধ্যতামূলক। যে সমস্ত স্কুলের ডাইস কোড রয়েছে, তাদের পড়ুয়ার নাম আপলোড করতে হয় সরকারি পোর্টালটিতে। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই অভিভাবকদের যোগসাজশে কিছু পড়ুয়ার নাম আপলোড করা হচ্ছে না। অর্থাৎ ওই পড়ুয়া পড়াশোনা করছে বেসরকারি স্কুলটিতে, আবার সরকারি সুবিধা নেওয়ার জন্য নাম থাকছে কোনও সরকারি স্কুলে। পুরো বিষয়টি অনৈতিক বলেই মানছেন শিক্ষাকর্তারা। কিন্তু সরকারিভাবে বেসরকারি স্কুলগুলিতে নজর না থাকায় এমন ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বছর দুয়েক আগে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছিল উত্তরবঙ্গ সংবাদে। ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শিক্ষাকর্তারা। কিন্তু ছবিটা বদলায়নি।
জলপাইগুড়ির জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক শ্যামলচন্দ্র রায় বলছেন, ‘বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের তথ্য বাংলার শিক্ষা পোর্টালে আছে কি না সেটা যাচাই করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি স্কুলে অনুপস্থিত থাকা পড়ুয়াদের খোঁজ নিয়ে দুটো স্কুলে পড়ার প্রবণতা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কেন সরকারি স্কুলে ঝোঁক? অভিভাবকদের একাংশই বলছেন, এখন সরকারি স্কুলে প্রচুর সুযোগসুবিধা। যেমন প্রতিবছর জুতো, জামা, ব্যাগ ইত্যাদি পাওয়া যায়। আবার সরকারি শংসাপত্র থাকলে উঁচু ক্লাসে ভর্তির ক্ষেত্রেও সুবিধা হয়। তাই অনেক অভিভাবকই চান, বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েকে ইংরেজি শিক্ষা দিতে। আবার সরকারি সুযোগের লোভও তাঁরা ছাড়েন না।
ক্রান্তি ব্লকের লাটাগুড়ি, ক্রান্তি, চ্যাংমারি, রাজাডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি স্কুল। সেসব স্কুলে একাধিক পড়ুয়ার নাম রয়েছে সরকারি স্কুলেও। তাদের অধিকাংশই সারাবছর সরকারি স্কুলে যায় না। অনেকক্ষেত্রে সরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষও চুপচাপ থাকে। কারণ মিড-ডে মিলের তথ্যে বেশি পড়ুয়া দেখিয়ে তাদের আর্থিক সুবিধা হয় বলে অভিযোগ।
চ্যাংমারি ডাঙ্গাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীনেশচন্দ্র রায় অবশ্য বলছেন, ‘পড়ুয়াদের স্কুলে ভর্তি করার সময় অভিভাবকদের একাংশ আমাদের কাছে বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করার তথ্য গোপন করে। ক্রান্তি ব্লকের বহু সরকারি স্কুলেই বেসরকারি প্রাথমিকের পড়ুয়া রয়ে গিয়েছে।’ শুধুমাত্র সরকারি স্কুলেই সন্তানদের পড়ানো আরতি রায়, ময়নুল হক, মোহন ওরাওঁ, অনিল রায়, জয়রাম ওরাওঁ প্রমুখ এমন অনৈতিক কাজের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণ চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক যুগল সরকার কিংবা উত্তর চ্যাংমারি বিএফপি কৃষ্ণ হালদাররা আবার এমন পড়ুয়ার সন্ধান পেলেই অভিভাবকদের সতর্ক করছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এই সমস্যা আদৌ কবে মেটাতে পারবে শিক্ষা দপ্তর, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।