প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার : সাঁড়াশি চাপ বোধহয় একেই বলে। বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়ুক তা রাজ্য সরকার চায় না। সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করে ভাড়া বাড়ালে কড়া ব্যবস্থার কথা বলা আছে। এছাড়া, ভাড়া বাড়ালে প্রতিযোগিতার বাজারে যাত্রীসংখ্যা কমার আশঙ্কা। আবার ভাড়া না বাড়ালে দিনকে দিন বেড়ে চলা জ্বালানির দাম, রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মীদের মাইনে দেওয়া একরকম অসম্ভবই হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দুইয়ের চাপে পড়ে বেসরকারি বাস মালিকদের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। এর জেরে আলিপুরদুয়ারের একাধিক রুটে বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ছে।
আলিপুরদুয়ারের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) সুশোভন মণ্ডল বলেন, ‘ভাড়ার তালিকা বেসরকারি বাসে টাঙিয়ে রাখতে হবে। কোনওভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে না।’ সরকারি এই নির্দেশে তাঁরা হতাশ বলে আলিপুরদুয়ার তরাই অঞ্চল মোটর ওয়ার্কস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে দেবাঙ্কর দে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘এমনিতেই আলিপুরদুয়ার থেকে কোচবিহারের মতো রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। একাংশ রুটে আগের তুলনায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়েছে। বাস চালিয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ায় আমাদের অনেকেই বিকল্প জীবিকা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।’ সমস্যার বিষয়ে তাঁরা সংগঠনগতভাবে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আলিপুরদুয়ার ডুয়ার্স মোটর ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোপাল চক্রবর্তী জানিয়েছেন।
সরকারি বাসে ভরতুকির ব্যবস্থা থাকলেও বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা নেই। একদিকে ভাড়া বাড়ানো যাবে না বলে সরকারি চোখরাঙানি। অন্যদিকে, সমানে জ্বালানি তেল ও গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে চলা।
সমস্যার মোকাবিলায় একাধিক রুটে অনেক বাসই বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু বাস রোটেশন ভিত্তিতে চালানো হচ্ছে। এর জেরে বাসকর্মীদের কোনওদিন কাজ জোটে আবার কোনওদিন তা জোটে না। বিকল্প জীবিকা হিসেবে এই বাসকর্মীদের কেউ কেউ বর্তমানে টোটো চালানোর মতো কাজ করছেন। এরই মধ্যে বাস মালিকদের কেউ কেউ পুরোনো বাস বিক্রি করে নতুন বাস কেনার কথা ভেবেছিলেন। তবে নতুন বাসের যা দাম তা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের সাধ্যের মধ্যে কুলোচ্ছে না। বর্তমানে ৩২ সিটের একটি বাসের দাম প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা মতো পড়ছে। বাস চালিয়ে এই টাকা উঠবে কি না তা বাস মালিকদের জানা নেই। ফলে পুরোনো বাস বিক্রি করে বাস মালিকদের অনেকেই অটো, টোটো, ছোট যাত্রীবাহী গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছেন। আর এর জেরে আলিপুরদুয়ারে বেসরকারি বাস পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্যাটি উত্তরোত্তর কমেই চলেছে।
আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা জয়দীপ বণিক ৩৫ বছর ধরে বেসরকারি বাসের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি সৃষ্ট পরিস্থিতির জেরে তিনি তাঁর ছয়টি বাসের মধ্যে দুটিকে বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। বাকি বাসগুলিকে তিনি রোটেশনে চালাচ্ছেন। জয়দীপ বললেন, ‘একটা সময় ডিজেল ৫৫ টাকা লিটার ছিল। সেই সময় বাসের যা ভাড়া ছিল তা এখনও একই বয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন ডিজেলের দাম বেড়ে লিটারে ৯৩ টাকারও বেশি হয়েছে। সময়ের পাশাপাশি বাসের যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। এত কিছু সামলাতে গিয়ে প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছে। কর্মীদের মাইনে ঠিকঠাক দেওয়া যাচ্ছে না।’ সমস্যা মেটাতে ওপরমহল যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় সেই দাবিতে জয়দীপরা সরব হয়েছেন।