শমিদীপ দত্ত ও নিবেদিতা দাস, শিলিগুড়ি ও মাটিগাড়া: সামনেই কালীপুজো। আলোর উৎসবে মাতবে সবাই। কিন্তু চাঁদার জুলুমবাজির অভিযোগ উঠে আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। শহর থেকে গ্রাম, গাড়িচালক সবাই চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ। এনিয়ে অবশ্য শাসকদলের নেতা থেকে প্রশাসনিক কর্তারা গতে বাঁধা বুলিতে দায় এড়াচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই চাঁদা আদায়ে দাপট বাড়ছে পুজোর উদ্যোক্তাদের।
শিলিগুড়ি শহরের বিবেকানন্দ রোড ধরে টোটোয় যাত্রী নিযে যাচ্ছিলেন অলোক ভদ্র। হঠাৎই টোটোর সামনে চাঁদার বই নিয়ে রাস্তা আগলে দাঁড়াল বছর বারোর এক ছেলে। রীতিমতো ধমকের সুরে, ‘চাঁদা দিতে হবে।’ অলোকবাবু তাকে সামনে থেকে সরে যেতে বলতেই আশপাশ থেকে বেশ কয়েকজন যুবক এসে টোটো ঘিরে ধরে। বাধ্য হযে অলোকবাবু ২০০ টাকা বের করতেই সামনে যাওয়ার অনুমতি মিলল। অলোকবাবু বলেন, ‘দিনেদুপুরে যদি এমন ঘটনার মুখে পড়তে হয়, তাহলে আর কী বলার আছে?’
একই চিত্র নজরে পড়ল ঝংকার মোড় সংলগ্ন চতুর্থ মহানন্দা সেতুর কাছেও। সেতু থেকে গাড়ি নামতেই সামনে হাত দেখিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন আটজন যুবকের এক দল। চাঁদার স্লিপ ঢুকিয়ে দেওযা হল গাড়িচালকের পাশের জানলা দিয়ে। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই। সেতুর ওপর গাড়ির লম্বা লাইনে আটকে পড়েছে অ্যাম্বুল্যান্সও। দেখার অবশ্য কেউ নেই। তাই অবাধে চলছে জুলুমবাজি। চয়নপাড়ার পাল পাড়ার কাছেও একই পরিস্থিতি। শুধু এই কয়েকটি এলাকাই নয়, শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা থেকে অলিগলি সবজায়গাতেই কালিপুজোকে কেন্দ্র করে চলছে চাঁদার জুলুম। যাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো সমস্যায় ব্যবসায়া মহল থেকে শুরু করে শহরের সাধারণ মানুষ।
মাটিগাড়ার ১২ নম্বর রাজ্য সড়কেও চাঁদার জুলুমে ত্রস্ত গাড়িচালকরা। তাঁরা ক্ষোভের সুরে জানাচ্ছেন, হঠাৎই মাঝ রাস্তায় গাড়ি আটকে একদল যুবক তাঁদের থেকে জুলুম করে কালীপুজোর চাঁদা আদায় করছে। অটো চালক সন্তোষ সাহার বক্তব্য, চাঁদা না দিলে গাড়ি আটকে হুমকিও দিচ্ছে তারা। বিষয়টি প্রশাসনকে দেখা উচিৎ। মাটিগাড়া ব্লকের গোয়েল মোড়, ভাঙ্গাপুল, খাপরাইল, টিসিপি, গাড়িধুরাতেও একই চিত্র। রাস্তার কয়েক মিটার অন্তর অন্তর কালীপুজোর জন্য জোর করে চাঁদা তুলছেন যুবকেরা। পাঁচকেলগুড়ির চা বিক্রেতা মহম্মদ আলম বলেন, ‘যুবকেরা গাড়ি প্রতি কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলছেন এবং পর্যটকদের গাড়ি হলে চাঁদার সংখ্যা ১০০ থেকে ৫০০ হয়ে যাচ্ছে।’ প্রশ্ন উঠছে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।
এদিন শহরের ফুলেশ্বরী রেলগেট এলাকাতেও দেখা যায় চাঁদার জুলুম। একের পর এক টোটো, গাড়ি দাঁড় করিয়ে নেওয়া হয়েছে চাঁদা। এবিষয়ে পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার বলেন, ‘কেউ টাকা দিতে চাইলে দেবে। জোর-জুলুম না করলেই হল।’ শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসিপি শুভেন্দ্র কুমারের অবশ্য বক্তব্য, ‘অভিযোগ পেলেই এব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রাস্তা আটকে চাঁদার এই জুলুমে ক্ষোভপ্রকাশ করছে ব্যবসায়ী মহলও। ব্যবসার ওপরও এর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।