গাজোল: বয়স ৭৯ বছর। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় ১৯ বছর আগে। শরীর এখন আর আগের মতো সঙ্গ দেয় না। তবুও এত কিছুর মধ্যেও শিল্প সৃষ্টির উল্লাসে মেতে রয়েছেন চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্পী সুদাম নন্দী। যদিও কোথাও থেকে তেমন সম্মাননা পাননি তবুও নিজের খেয়ালে তিনি সৃষ্টি করছেন একের পর এক শিল্পকলা। তাঁর এই সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হয়েছে মাটি, কাঠ, সুপারি, নারকেল, নারকেলের ছোবা এবং আঠা। এই সমস্ত জিনিস দিয়েই বানিয়ে ফেলেছেন বিভিন্ন ধরনের মূর্তি এমনকী অনেক হাতের কাজও।
সুদাম বাবু জানান, তাঁর জন্মভিটে উত্তর দিনাজপুর জেলার মারনাই গ্রাম। প্রত্যন্ত এলাকা হলেও বর্ধিষ্ণু এই গ্রামে চল রয়েছে শিল্প সংস্কৃতির। তাঁর বাবাও একজন শিল্পী। ছোট থেকেই কাগজের উপর রং তুলি দিয়ে ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন তিনি। এছাড়াও পাড়ার ক্লাবে সরস্বতী ঠাকুরের মূর্তিও তৈরি করেছেন। ময়না হাইস্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে চলে আসেন গাজোলের শিক্ষক পল্লীতে। সেই সময় সেতার বাজানোর খুব শখ ছিল। কলকাতা থেকে একজন শিল্পী আসতেন মালদায়। তার কাছে সেতারের তালিম দিয়েছেন। ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণের পর থেকেই এই শিল্পকর্মে মনোনিবেশ করেন।
ইতিমধ্যে তৈরি করেছেন পদ্মফুল, রবি ঠাকুর, শিবাজীর আবক্ষ এবং পূর্নাবয়ব মূর্তি, কাঠ দিয়ে তৈরি করেছেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের ব্যবহৃত রথ, মা দুর্গা, গৌর-নিতাই এবং ভক্ত সহযোগে নগর সংকীর্তন, দেবী সরস্বতী, বিশ্বামিত্রের তপোভঙ্গ, নৃসিংহ অবতার, মেরীর কোলে যিশু, সুপারির তৈরি মা দুর্গা এরকম অসংখ্য জিনিস। এছাড়াও মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন টেরাকোটার বিভিন্ন মূর্তি। তাঁর এই সমস্ত কাজে তাকে সঙ্গ দিয়েছেন স্ত্রী বীণাপাণি নন্দী।
তিনি আরও জানান, তেমনভাবে প্রচারের আলোয় আসতে চান না তিনি। তাই নিভৃতেই এক মনে কাজ করে চলেছেন। এর আগে জেলা শিল্প দপ্তর এবং বিষাণের নাট্যমেলায় তার এই সমস্ত কাজ প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি চান তাঁর অবর্তমানে সরকার এই বাড়িতে সংগ্রহশালা গড়ে তুলুক। তাঁর এই শিল্পকর্ম গুলিকে সংরক্ষণ করা হোক। পাশাপাশি অন্যান্য যে সমস্ত শিল্পী রয়েছে তাদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসও থাকুক এই সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালা তৈরির জন্য বর্তমানে তারা যে বাড়িতে বাস করছেন সেই বাড়িটি সরকারকে দান করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি।