বালুরঘাটঃ ‘দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার, রানার। কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।’ সুকান্ত ভট্টাচার্যর (Sukanta Bhattacharya) লেখা ‘রানার’ কবিতার লাইনগুলি যেন তাঁর মূলমন্ত্র। কবি সুকান্তর লেখা রানারের পায়ের ‘ঝুম ঝুম’ শব্দটিও যেন এখানে কিছুটা রূপ বদলে দিয়েছে সাইকেলের (bicycle) ‘ক্রিং ক্রিং’ শব্দ। খবর পড়ানোর নেশা নিয়েই বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রোজ ১০০ কিমির বেশি পথ পাড়ি দেন মাধব চক্রবর্তী। বয়সের ভারকে কার্যত তোয়াক্কা না করেই সাইকেল চালিয়ে সংবাদপত্র পাঠের (newspapers reading) উপকারিতা বোঝান বালুরঘাটের এই ‘রানার’।
শহর লাগোয়া চকভৃগুর ডাকরা এলাকার বাসিন্দা বছর ৬৫-র মাধববাবু যেন কবির লেখা সেই কবিতার হুবহু এক রানার। তবে এক্ষেত্রে চিঠির বোঝা নয়, খবরের কাগজের বোঝা হাসিমুখে বয়ে নিয়ে চলেছেন দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে। প্রায় ১০০ কিলোমিটার চলাচলের সঙ্গী সাইকেলটিই যেন তাঁর আস্ত একটি বাড়ি। কী নেই সেখানে, হরেকরকম খবরের কাগজ থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়ার জিনিস, ছাতা, গামছা সবই রয়েছে সেই সাইকেলটিতে। পথচলতি মানুষের হাতে সংবাদপত্র গুজে দেন তিনি। তার সঙ্গে সংবাদপত্র পড়ার প্রয়োজনীয়তা মানুষকে ধরে তিনি বোঝান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সময়কালীন সময়ে ওপার বাংলা থেকে এপারে চলে এসে আশ্রয় নেন বালুরঘাটের ভূষিলাতে। পরে মাধববাবুর ঠিকানা বদলে যায় ডাকরায়। ওপারেও পেপার বিক্রি করতেন তিনি। সেই নেশায় ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে বালুরঘাট থেকে বোল্লা অবধি বিভিন্ন গ্রামে সাইকেলে ঘুরে রোজ বিলি করেন ২০০ পেপার। সময়ের ফাঁকে নিজেও একসময় সবগুলো পেপারেই চোখ বুলিয়ে নেন।
মাধব চক্রবর্তী জানান, ‘এটাই জীবনের একমাত্র নেশা। শুধু মানুষকে খবর পড়ানোর ভাবনা থেকেই সকাল থেকে রাত অবধি ছুটে বেড়াই গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে। কিন্তু এখনও বার্ধক্য ভাতা জোটেনি, এটাই দুঃখের।’ সহকর্মী মাধব মৈত্র বলেন, ৬৫ বছরের একজন সহকর্মীর এমন উদ্দীপনা উজ্জীবিত করে।’