প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ১৯৬৬ সালে তৎকালীন ইন্দিরা জমানায় মিজোরামে বোমাবর্ষণ করেছিলেন রাজস্থানের দাপুটে কংগ্রেস নেতা শচীন পাইলটের বাবা রাজেশ পাইলট! মঙ্গলবার এই মর্মে রাজস্থান কংগ্রেস এবং পাইলট পরিবারের ওপর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। গতকাল অজ্ঞাতনামা এক টুইটে এই অভিযোগ আনেন তিনি। টুইটে তাঁর দাবি, ‘১৯৬৬ সালের ৫ মার্চ ভারতীয় বায়ুসেনার দুই বিমানচালক সুরেশ কালমাদি এবং রাজেশ পাইলট মিজোরামের রাজধানী আইজলে বোমাবর্ষণ করেছিলেন৷ পরবর্তীকালে এই দুই ব্যক্তি কংগ্রেসের টিকিটে সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন৷’ এই মন্তব্যের সূত্রেই বিপাকে পড়েন মালব্য।
অমিত মালব্যর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পালটা টুইট করেছেন রাজেশ পাইলটের ছেলে, রাজস্থানের প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা শচীন পাইলট৷ অমিত মালব্যকে পালটা নিশানা করে তাঁর দাবি, ‘আপনি ভুল তারিখ, ভুল তথ্য দিয়েছেন৷ আমার প্রয়াত বাবা বায়ুসেনার এক পাইলট হিসেবে বোমাবর্ষণ করেছিলেন ঠিকই, তবে সেটা মিজোরামে নয়, ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধে৷ তা ছাড়া আমার বাবা ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগদান করেছিলেন ২৯ অক্টোবর, ১৯৬৬৷’ নিজের বক্তব্যের সমর্থনে প্রাক্তন বায়ুসেনা পাইলট রাজেশ পাইলটের নিয়োগ পত্রের প্রতিলিপিও টুইট করেছেন তাঁর ছেলে শচীন পাইলট৷
প্রসঙ্গত, ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করে ১৯৬৬ সালের ৫ মার্চ মিজোরামে বোমাবর্ষণ করেছিলেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। সদ্যসমাপ্ত লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া ভাষণে কংগ্রেসকে নিশানা করতে গিয়ে এমনই অভিযোগ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ ‘মিজোরামের অসংখ্য অধিবাসীরা কি আমাদের দেশের নাগরিক নন? কেন তাঁদের ওপর বোমাবর্ষণ করা হয়? আজও মিজোরামের বাসিন্দারা প্রতি বছর ৫ মার্চ শোক দিবস পালন করেন৷ কংগ্রেস এই জঘন্য ঘটনা দেশবাসীর কাছে গোপন রেখেছিল’, বলে লোকসভায় দেওয়া ভাষণে অভিযোগ জানান প্রধানমন্ত্রী৷ এই অভিযোগের সূত্রেই সুর চড়িয়ে প্রয়াত প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রাক্তন বায়ুসেনা পাইলট রাজেশ পাইলটকে নিশানা করতে গিয়ে প্রবল বিপাকে পড়েছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য৷ তাঁর বিরুদ্ধে অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য তুলে ধরার অভিযোগ এনেছে কংগ্রেস।
তাত্পর্যপূর্ণ হল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এহেন চাঞ্চল্যকর অভিযোগকে খন্ডন করতে পিছপা হয়নি কংগ্রেস শিবির৷ অমিত কুমার মালব্যর অভিযোগ এবং শচীন পাইলটের পালটা দাবির বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও কংগ্রেসের তরফে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগকে নস্যাত্ করেন প্রবীণ সাংসদ জয়রাম রমেশ৷ তাঁর পালটা দাবি, ‘তিনি(ইন্দিরা গান্ধি) মিজোরামকে রক্ষা করেন৷ ভারতের একটি রাজ্যের সঙ্গে যারা যুদ্ধ শুরু করেছিল তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন৷ এরই ফলশ্রুতিতে ৩০ জুন ১৯৮৬ তারিখে একটি শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয়৷ যে পদ্ধতিতে এই শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয় তা একটি অসাধারণ গল্প যা প্রমাণ করে মিজোরাম ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ যিনিই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসুন না কেন, তিনি উপলব্ধি করতে পারবেন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ কতটা কঠিন ছিল৷ অবিশ্বাস্য কঠিন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় নিয়ে একজন প্রধানমন্ত্রী অন্য প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে দোষারোপ করতে পারেন না৷’ এই ঘটনার সূত্রে পর্যবেক্ষক মহলের মতে, নির্বাচনমুখী রাজ্য রাজস্থানে রাজনৈতিক পালাবদলে কূটকৌশল রূপে বিজেপির এই ‘বেচাল’ পদক্ষেপ, শচীন পাইলটের তরফে পেশ করা বয়ানে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ প্রমাণিত হল বলেই মনে করা হচ্ছে।