জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) কদমতলা মোড় থেকে তিন বন্ধু কেরানিপাড়ার দিকে যাচ্ছিল। দুজন সাইকেলে ও একজন হেঁটে। দেখে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মনে হল। তাদের মধ্যে চলছিল আলোচনা। আলোচনার বিষয় আইপিএল। কিন্তু আলোচনা শুধু ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ থাকল না। পিছু নিয়ে জানা গেল, কে কত টাকা অনলাইন বেটিং অ্যাপে (Betting App) লাগিয়েছে বা কে কততে জিতল বা হারল তা নিয়ে কথাবার্তা চলছে। তিনজন দশম শ্রেণির ছাত্র। ‘মা-বাবা জানেন?’ প্রশ্নের উত্তরে হাসতে হাসতে তাদের উত্তর, ‘এসব সিক্রেট আমাদের মধ্যেই থাকে।’
শুধু এই তিনজন নয়, শহরের অনেক পড়ুয়ারা এভাবে বেটিংচক্রে আসক্ত হয়ে পড়ছে। কোথা থেকে আসছে টাকা? পকেট মানি কিংবা বাবা-মা’র অনলাইন পেমেন্ট অ্যাপ থেকে ছাত্ররা টাকা নিচ্ছে। সেখান থেকে প্রতি ম্যাচে ১০, ২০, ৫০, ১০০ টাকা লাগাচ্ছে। কখনও কিছু টাকা জিতছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে হারাচ্ছে প্রচুর টাকা। বন্ধুরা মিলে প্রতি আইপিএলে টিম বানিয়ে টাকা লাগানো মাস্ট। কোথা থেকে তাঁরা পেল এসব অ্যাপের ঠিকানা বা আইডি? ওদের একজন বলল, ‘বিজ্ঞাপন থেকে। আইডি বানাতে ফোন নম্বর লাগে। সেটা তো মা-বাবা কারও একটা নম্বর দিয়ে দিই। টাকা এলে না তুলে অ্যাপে রেখে দিই। অনেক টাকা হলে তুলব।’
তিন পড়ুয়ার কাছ থেকে তাদের অভিভাবকদের নাম, ঠিকানা অনেক জানার চেষ্টা করলে তারা বলতে অস্বীকার করে। ফণীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউশনের এক পড়ুয়ার বাবার কথায়, ‘আমার ছেলে এরকম নেশায় পড়েছিল। হঠাৎ একদিন আমার ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে জানতে পারি ও একটা বেটিং অ্যাপে টাকা লাগাচ্ছে। অনেক বুঝিয়ে এই নেশা ছাড়াতে পেরেছি। কিন্তু ওদের স্কুল ও অন্য স্কুলের অনেকে এই বেটিং অ্যাপের নেশায় বুঁদ।’ জলপাইগুড়ির শিক্ষক প্রসেনজিৎ চৌধুরীর বক্তব্য, ‘এখন ছেলেমেয়েরা সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পড়ার চাপ যত কমছে, তত নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আসক্তি বাড়ছে। ওদের কাউন্সেলিং করা খুব প্রয়োজন।’ সহমত পোষণ করেছেন মনোবিদ ডঃ আশিস সরকার। তাঁর কথায়, ‘বড়রা যা করে শিশুরা সেগুলো অনুসরণ করে। অনলাইন গেমিং একটা বড় নেশা। এই নেশা কোনও ওষুধে সারানো সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন শিশুদের মনস্তত্ত্ব বুঝে ওদের ভালো ও খারাপের বিভাজনটা বোঝানো। এতে অভিভাবক আর শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’