সৌম্যজ্যোতি মণ্ডল, মালদা: প্রায় চার বছর ধরে বর্ষায় উইকেন্ডে মালদা তথা গৌড়বঙ্গবাসীর ডেস্টিনেশন ভাটরা বিল। পুরাতন মালদার সাহাপুর এবং যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে রয়েছে এই ভাটরা বিল, যা স্থানীয়দের কাছে দক্ষিণ ভাটরা বিল নামে পরিচিত। বছরের অন্যান্য সময় এই বিল প্রায় শুকনোই থাকে। কিন্তু বর্ষা শুরু হতেই পালটে যায় এর রূপ। অন্য সময় যেখানে ধান চাষ হয়, বর্ষার সময় সেখানে নৌকো চলে। এই বিলের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে মহানন্দা, টাঙ্গন ও বেহুলা নদীর। ফলে বর্ষায় নদীতে জল বাড়লেই অতিরিক্ত জল বিলে ঢুকতে শুরু করে। তাতেই ভাটরা বিল হয়ে ওঠে মোহময়ী। বিলের জলে প্রবল স্রোত। পাড়ে ভাঙে ছোট ছোট ঢেউ। আর এই রূপের কারণে বর্তমানে মিনি দিঘা হিসেবে পরিচিত ভাটরা।
এবছরও বর্ষায় মালদার মিনি দিঘায় ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকরা। ৮ থেকে ৮০ সকলেই অনাবিল আনন্দে বর্ষার মরশুমে ভাটরা বিলের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। প্রায় প্রতিদিনই পর্যটকরা ভিড় জমান ভাটরায়। তবে সব থেকে বেশি ভিড় হচ্ছে শনি এবং রবিবার। উইকেন্ডে কার্যত পা ফেলার জায়গা নেই। ভাটরা বিলে স্নান করে অনেকে সমুদ্র স্নানের আনন্দ মেটাচ্ছেন। চলছে ছবি তোলার হিড়িক। রয়েছে নৌকোয় ভ্রমণের সুযোগও। ৩০ টাকার টিকিটে নৌকোয় করে বেশ কিছুক্ষণ বিল ঘোরার সুযোগ মিলছে।
কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে ভাটরায়। প্রাইভেট বাইক বা গাড়ি ছাড়া আসার উপায় নেই। রাস্তায় নেই পর্যাপ্ত আলো। ফলে সন্ধ্যার পর পর্যটকদের থাকার উপায় নেই এখানে। রয়েছে নিরাপত্তার অভাব। তাই ভাটরায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের মতে, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ভাটরা বিলকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। বর্ষার সময় বিলের যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেই সৌন্দর্য দেখতে রাজ্যের বহু প্রান্ত থেকে মানুষ আসবে। কারণ ভ্রমণপিপাসু মানুষ সবসময় নতুন ডেস্টিনেশনের খোঁজ করেন।
এর আগে সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পুরাতন মালদা ব্লক প্রশাসন সৌন্দর্যায়নের বেশকিছু উদ্যোগ নিলেও সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। তবে একটা বিষয়ে সবাই নিশ্চিত এই বিলকে ঘিরে পঞ্চায়েতের উপার্জনের একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে স্থানীয়দের জন্যও। প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
ভাটরা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে ইংরেজবাজার পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সুতপা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বর্ষাকালে ভাটারার এই রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। এর আগেও আমি একবার এসেছি। তবে প্রশাসনের উচিৎ যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া। পাশাপাশি সৌন্দর্যায়নের ওপর জোর দেওয়া। সব থেকে বড় সমস্যা পর্যটকদের এত ভিড়ের পরও পুলিশি নজরদারি নেই। অনেকেই জলে অনেক দূর চলে যাচ্ছে। ফলে যে কোনও সময় বিপদ হতে পারে।’
এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘গত ৩-৪ বছর ধরেই ভাটরা বিলের সৌন্দর্য আমাদের নজরে এসেছে। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ভাবনা আমাদের মনেও রয়েছে। এই নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল বর্ষার মরশুম ছাড়া ওখানে জল থাকে না। তখন আর পর্যটকদের ভিড় থাকে না। ফলে সরকারের তরফে কিছু করা হলে বাকি ১০ মাস সেই সব জিনিস রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সমস্যা হবে। তবুও অস্থায়ীভাবে কিছু করা যায় কিনা সেটাও আমরা ভাবছি।’